জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন প্রকাশিত খসড়া তালিকায় চট্টগ্রাম বিভাগে নদ-নদীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৬০। এ তালিকায় অসংগতি রয়েছে বলে দাবি করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। তবে নদী রক্ষা কমিশনের দাবি, খসড়া তালিকায় যেসব আপত্তি এসেছে, তা পর্যালোচনার পর চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হবে। এতে নদীর সংখ্যা বাড়তে পারে, কিছু বাদ পড়তে পারে। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হবে।
তালিকায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে পড়েছে মেঘনা নদী। সবচেয়ে বেশি নদ-নদী আছে কুমিল্লায়। এগুলো হলো আরচি, উত্তর আকালিয়া, কাকরী, কাঠালিয়া, কামতা, খিরাই, কালা ডুমুর, ক্ষিরাই, পুংগাজুর কোদালিয়া, গুণী, গোঙর, গোবিন্দপুর, গোমতী, ঘুংঘুর, চর কুমারিয়া, ছোট ফেনী, ডাকাতিয়া, তুলশিঘাটা, ধনাগোদা, পাগলী, পুরান বাতাকান্দি, মধুকুপি, মধুমতি, শুভানগর, সরস্বতী, সিদ্ধেশ্বরী ও সোনাইছড়ি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আছে- তিতাস, পুটিয়া, বড়ইচারা, বিজনা, বুড়ি, মধ্যগঙ্গা, লাখু, হরল ও সিংড়া, ফেনীর কহুয়া, মুহুরী ও সিলোনিয়া, নোয়াখালীতে আছে হাতিয়া নদ এবং লক্ষীপুরে আছে গজারিয়া, ভুলুয়া।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে আছে কুহেলিয়া ও উখিয়া-টেকনাফের নাফ নদী, বাঁকখালী নদী। খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী, মাইনী ও ফেনী নদী, রাঙ্গামাটিতে ইছামতি, কর্ণফুলী, রাইংখিয়ং, কাচালং ও কাপ্তাই লেক, বান্দরবানে মাতামুহুরী, সাঙ্গু নদীর অবস্থান। এ ছাড়া চট্টগ্রামের চান্দগাঁও-রাউজান-হাটহাজারী-ফটিকছড়ি-মানিকছড়ি-রামগড় অংশে আছে হালদা নদী ও চন্দনাইশে চান্দখালী নদী।
তালিকায় চট্টগ্রামের বাকলিয়া ও পতেঙ্গাকে বলা হয়েছে ‘উপজেলা’। সবচেয়ে কম নদী চট্টগ্রাম বিভাগে। হাইকোর্টের রায় অনুসারে, সিএস অনুসারে নদী চিহ্নিত করার কথা বলা হলেও কোনো জরিপ রেকর্ডের ভিত্তিতে এই খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। পরিবেশকর্মী অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী বলেন, নদী মানবজীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদী জীবনের বাহক, সামাজিকতার পরিবাহক, সংস্কৃতির স্রোতধারা। সভ্যতার শুদ্ধি-শুচিকারক, পরিবৃদ্ধি, পরিচালন, পরিবহন, পরিসমাপ্তিতে নদী অন্যতম অনুষঙ্গ, অনুঘটক।
দুঃখ-সুখের দোলায় দোলা জীবনের অবারিত স্রোতের মতো মহাকালের মহাসমুদ্রে জলের জলাঞ্জলি দেয়াই নদীর নিরবচ্ছিন্ন সাধনা। নদীর গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য, আমাদের সমাজে নদীর নাব্য ও গতিময়তা অবারিত রাখার জন্য, নদীর প্রয়োজনীয়তা বিশ্বময় জাগিয়ে রাখার জন্য, নদী ঐতিহ্যকে ধারণ করার জন্য, নদী সংকটকে পর্যালোচনার জন্য তা নীতিনির্ধারকদের নজরে আনা জরুরি।
জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদ-নদীর তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হয় জরিপ অধিদপ্তরের সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) ও আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) দলিলের ওপর। জেলা প্রশাসকেরা নিজ নিজ জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে পাঠান। এরপর এই খসড়া তালিকা তৈরি হয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য