যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ছালাভরা। এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কাজের সাথে জড়িত। কেউ কাঠ কাটেন, কেউ তা দিয়ে কাঠামো ও চওড়া তক্তা তৈরি করেন। কেউ তাতে শৈল্পিক কারুকার্য ফুটিয়ে তোলেন। অন্য কেউ শিরিশ কাগজ দিয়ে ঘষে তাতে বার্নিশ করেন। দীর্ঘদিন ধরে এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা এ পেশার সঙ্গে জড়িত থাকায় মানুষের মুখে মুখে গ্রামটি পরিচিতি পেয়েছে ‘ফার্নিচার গ্রাম’ হিসেবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ছোট-বড় দুই শতাধিক কারখানা। যেখানে তৈরি হয় আলমারি, শোকেস, ড্রেসিং টেবিল, খাট, পড়ার টেবিল, সোফাসেটসহ নানা রকমের আসবাব। সাশ্রয়ী মূল্যে এসব আসবাব কিনতে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নেত্রকোনা, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা এখানে আসেন। গ্রামেই প্রতিদিন অন্তত ১০ লাখ টাকার আসবাব বিক্রি হয়। সম্প্রতি গ্রামটিতে গিয়ে বিভিন্ন কারখানায় মানুষের কর্মযজ্ঞ দেখা যায়।
জানা যায়, সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাব তৈরি হয় কারখানাগুলোয়। আসবাব তৈরিতে কাঠের জোগান আসে টাঙ্গাইল, নওগাঁ ও ময়মনসিংহের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে। কারখানাগুলোয় অন্তত ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আশপাশের গ্রামেও কাঠের সামগ্রীর কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে। একটি কারখানায় আসবাবে নকশা করতে দেখা যায় শ্রমিকদের। কারিগররা কিছু নকশা হাতে তৈরি করছিলেন, কিছু আবার কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে তৈরি হচ্ছিল।
শ্রমিকেরা জানান, যন্ত্রে তৈরি নকশায় একজন গ্রাফিক ডিজাইনার প্রয়োজন। এ ধরনের নকশার চাহিদাও একটু বেশি। নকশা তৈরির পরের কাজ করেন রং মিস্ত্রি। তিনি ঘষে পলিশের পর রং করে বিক্রির উপযোগী করেন। গ্রামের কারখানাগুলোর বেশিরভাগেরই নাম নেই। একটি কারখানার কাঠমিস্ত্রি সুজন মিয়া বলেন, ‘আগে টাঙ্গাইলে কাজ করতাম। এখন বাড়ির কাছেই কারখানা হয়েছে। এখানে তিন বছর ধরে কাজ করছি।’ শাহ আলী নামের আরেকজন বলেন, ‘চুক্তির ভিত্তিতে পারিশ্রমিক পান। তার মতো প্রায় ৫০০ শ্রমিক এভাবে কাজ করছেন।’
স্থানীয় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে একটি কারখানার রংমিস্ত্রি আশিক। তিনি বলেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করি। ওদের আন্ডারে কাজ করে দিনে সর্বনি¤œ ৪০০ টাকা আয় হয়।’
ছালাভরা গ্রামে প্রথম দিককার কারখানার একটি শরিফুল ইসলামের ‘শরিফ ফার্নিচার’। ২০ বছর আগে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে এ কাজ শুরু করেন। এখন তার অধীনে ৫০-৬০ জন শ্রমিক রয়েছেন। শরিফুল বলেন, এখন সবাই আমাদের এই গ্রামকে ‘ফার্নিচার গ্রাম’ বলেই চেনে।
হারুন কাঠ ফার্নিচারের মালিক হারুন বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসবাব কিনতে আসেন। সরকার ঋণের ব্যবস্থা করলে অনেকে ব্যবসা বড় করতে পারবেন।
এ ব্যাপারে কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার বলেন, আসবাব তৈরির কারখানার প্রসারে ক্ষুদ্রঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মসংস্থান ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ওই গ্রামের ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে পারবেন। প্রয়োজনে তাদের উন্নত প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য