-->
শিরোনাম

জমে উঠেছে কাজিপুরে ভাসমান পাটের হাট

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
জমে উঠেছে কাজিপুরে ভাসমান পাটের হাট
সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার ভাসমান পাটের হাট

সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল নাটুয়ারপাড়া। এর কোল ঘেঁষে বয়ে চলা প্রমত্তা যমুনায় জটলা বাধা অনেক নৌকা। এই নৌকাতেই বসেছে পাটের হাট। নদীপথে ক্রেতা-বিক্রেতাদের যাতায়াত সুবিধার কারণে ভাসমান এ হাট সরগরম হয়ে ওঠে ভোর থেকেই। চলে বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। শত বছর ধরে বসছে নাটুয়ারপাড়ার ব্যতিক্রমী এ হাটটি।

 

দূর-দূরান্ত থেকে নৌকাযোগে এ ভাসমান পাটের হাটে পাট কেনাবেচা করতে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নৌকার পাশাপাশি নদীপাড়েও প্রচুর পাট কেনাবেচা হয়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম অনেক কম। সপ্তাহের দুদিন শনি ও বুধবার বসে এ হাট।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে ৫ হাজার ৬৪৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৩৫০, উল্লা পাড়ায় ১ হাজার ৬২০, বেলকুচিতে ১ হাজার ৯৬০, শাহজাদপুরে ৪৩৫, তাড়াশে ৭৪৫, রায়গঞ্জে ৮৯২, চৌহালীতে ৯২০, কামারখন্দে ১ হাজার ৭৩১ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। জেলায় মোট ১৭ হাজার ২৯৮ হেক্টর জমি থেকে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২০৯ টন।

 

সরেজমিন ওই ভাসমান পাটের হাটে গিয়ে দেখা গেছে, কাজীপুরসহ পার্শ্ববর্তী জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভ‚য়াপুর, বগুড়ার ধুনট, শেরপুর, সারিয়াকান্দির ক্রেতা-বিক্রেতারা ভাসমান এই হাটে পাট কেনাবেচা করতে এসেছেন নৌকাযোগে। তীর থেকে ১শ গজ ফাঁকে নোঙর ফেলে নৌকা থামিয়ে অর্ধশতাধিক নৌকায় কেনাবেচা হচ্ছে পাট। নৌকাতেই হাঁকডাক চলছে। বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাট কিনে অন্য নৌকায় উঠিয়ে নিচ্ছেন ব্যাপারিরা। নৌকার পাশাপাশি চরাঞ্চলের একমাত্র পরিবহন ঘোড়ার গাড়িতেও পাট বোঝাই করে স্থানীয় কৃষকরা পাট বিক্রি করতে আসেন।

 

মোন্নাত হোসেন নাটুয়ারপাড়ার ভাসমান এ পাটের হাটে পাট বিক্রি করতে এসেছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে। তিনি জানান, ‘চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। ১৬শ থেকে ২১শ টাকা মণ পাট বিক্রি করেছেন। পাটের দাম খুব কম।’

 

সোনাতলার চাষি আলমগীর বলেন, ‘পাট কাটা ও ধোয়ার কামলার দাম বেশি। পাটের দাম খুব কম। ৭ মণ পাট ১৫শ টাকা মণ দরে বিক্রি করছি। খরচা ওঠাই জুলুম। পাট কাটার পর পানির অভাবে জাঁক দিতে দেরি হয়েছিল। তাই পাটের মানও একটু খারাপ ছিল।’

 

ভাসমান এ হাটে পাট কিনতে এসেছেন জামালপুরের ব্যাপারি হবিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘এখানে বহু পাট ওঠে। নৌপথে যাতায়াত খরচ কম তাই এখানে আছি। আজকে ৩১২ মণ পাট কিনছি। আগের থেকে অনেক কম দাম। এগুলো আবার নৌকাতেই নিয়ে যাব।’

 

সারিয়াকান্দির ধারাবাইশ্যার ব্যাপারি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রতি বছরই এ হাটে পাট কিনতে আসি। এখানে দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। যাতায়াত খরচাও কম।’

 

নাটুয়ারপাড়া হাটের ইজারাদার ও কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেফাজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‘দূর-দূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারিরা প্রয়োজনে এখানে থাকতেও পারবেন। আগস্ট থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এখানে পাটের হাট বসে। প্রতি হাটে ৭ থেকে ৯ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয়।’

 

কাজীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, ‘এবার অতিরিক্ত খরার কারণে পাটের আবাদে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছি। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাঁক দিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তারপরও মোটমুটি বিঘা প্রতি আট-নয় মণ পাট পেয়েছেন কৃষকরা।’ কাজীপুর থানার ওসি শ্যামল কুমার দত্ত জানান, ডাকাতি এড়াতে হাটের দিন যমুনায় পুলিশের বিশেষ টহল থাকে। আমরা যেকোনো ধরনের সেবা দিতে প্রস্তুত।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জের উপপরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, সিরাজগঞ্জে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৯১০ হেক্টর। সেখানে অর্জিত হয়েছে ১৭ হাজার ২৯৮ হেক্টর। আমরা বিঘাপ্রতি গড়ে প্রায় ৮ মণ করে ফলন পেয়েছি। কৃষকরা বাজারে প্রতি মণ পাটের দাম পাচ্ছেন প্রায় ১৮০০ থেকে ২৫০০ টাকা। পাশাপাশি তারা পাটকাঠি পাচ্ছে, যা ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন।

 

তিনি বলেন, আমরা সাধারণত কৃষকদের আগাম জাতের পাটের চাষ করার জন্য অনুপ্রাণিত করছি। কৃষকেরা এর পরে আমন চাষ করতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version