সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ
সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ
গোপালপুর রাজৈর খেয়াঘাটে দুধ ও ফসল নিয়ে খেয়া পারাপার হচ্ছে কৃষক ও খামারি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধলেশ্বরী নদীতে একটি সেতুর অভাবে শিক্ষার্থীসহ কয়েকটি উপজেলার কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। উপজেলার গোপালপুর রাজৈর খেয়াঘাটে এই সেতুটি হলে সহজ হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেতু না থাকায় উপজেলার মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা খেয়া নৌকা। প্রতিদিন এই নৌকা দিয়ে পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

 

মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর, সাটুরিয়া ও পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার প্রায় ৬০ গ্রামের মানুষ এই নদীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করেন। নদীর এপারে উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গোপালপুর বাজার। নদীর খেয়া ঘাটের কাছে রয়েছে দুটি উচ্চ বিদ্যালয় ও কয়েকটি সরকারি বিদ্যালয়। এছাড়া রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী অফিসসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দপ্তর। এছাড়া দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের প্রয়োজনিয় কাজে ঢাকা যেতে হলো এই নদী পার হয়েই যেতে হয়।

 

সরেজমিনে উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুর রাজৈর খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গোপালপুর বাজারে দুধ বিক্রি করতে ওপার থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ শতাধিক প্রান্তিক কৃষক ও খামারি দুধ ও কৃষকের উৎপাদিত ফসল নিয়ে খেয়া পারাপার হচ্ছে। আধ ঘণ্টার বাজারে একবার খেয়া মিস করলে প্রায় এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয় তাদের। এপারের কৃষকরা তাদের গরু-ছাগল নদী পারাপার করে সকালে ওপারে ছেড়ে দিয়ে আসেন। আবার বিকেলে তাদের গরু ছাগল নিয়ে আসেন ওপার থেকে।

 

এপার ওপারের কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে কৃষকদের আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ফলে বাজার ধরতে কৃষক ও দুধ বিক্রেতাদের ভোরে এসে খেয়াঘাটে ভিড় জমায়। এপার থেকে খেয়া যাওয়ার পর গাদাগাদি করে উঠতে গিয়ে লাগে পাল্লা। এ সময় অনেকের মাথায় ও হাতে থাকা দুধ ধলেশ্বরী নদীর পাড়েই পড়ে যায়। এমনকি নৌকায় উঠতে ভারসাম্য বেশি হলে নৌকা ডুবে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। প্রতিদিন এ খেয়াঘাট দিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ পারাপার হয়।

 

সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজৈর খেয়াঘাটে ৪০০মিটার লম্বা সেতুটি নির্মাণ করার জন্য আনুমানিক ব্যয় ১ শত কোটি টাকা চেয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। বর্তমানে সেতুর ডিজাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি টিম সেতু নির্মাণস্থল পরিদর্শন করেছেন। কয়েকদিনে মধ্যে ব্রিজের টেন্ডার করা হবে বলে জানা যায়।

 

খেয়াঘাটের মাঝি সাহাজান মিয়া বলেন, গোপালপুর রাজৈর খেয়াঘাট দিয়ে টাঙ্গাইলের নাগরপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালি, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও ঘিওরের মানুষজন পারাপার হন। ইঞ্জিনচালিত দুটি নৌকা দিয়ে প্রতিদিন সকল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষ পারাপার করে থাকি। ধলেশ্বরী নদীর বুকে সেতুটি হলে কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে সেতুবন্ধনে মিলন মেলা ঘটবে। উপকার হবে কৃষক ও সাধারণ মানুষের। শুনে আসছি সেতু হবে। স্বপ্নের সেতু কবে হবে এমন প্রশ্নই তার।

 

স্থানীয় কৃষক আলি হোসেন বলেন, ধলেশ্বরী নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আমরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি। আমাদের এপার-ওপারের জমির আবাদি ফসল ও গরু ছাগল নিয়ে খেয়া পারাপার ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই। দিনে চার পাঁচবার খেয়া পারাপার হতে হয়। এতে কৃষকের কর্মঘণ্টাও বেশি লাগে। সময়মতো হাট বাজারে উৎপাদিত ফসল বেচাকেনা করতে পারি না। অসুস্থ রোগী নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় আমাদের। এদিকে রাত ৮টার পর থেকে পরদিন সকালে ৬টা পর্যন্ত ঘাটে খেয়া থাকে না। এ সময় জরুরি রোগী আমাদের পরতে হয় বিপাকে। পরদিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।

 

৭০ বছর বয়সি আশেক আলী বলেন, নদীতে সেতু না থাকায় প্রতিদিন আমার মতো আরো শত শত মানুষ খেয়া পারাপার হয়। অনেক সময় অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে যায়। এ সময় অনেকে সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠে, আবার অনেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। নদীর প্রবল স্রোতের পাকে পড়ে প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে। সেতুটি হলে কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হবে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারও ঘটবে, হবে কয়েকটি এলাকার মানুষের সেতুবন্ধন।

 

সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. নাজমুল করিম বলেন, রাজৈর খেয়াঘাটে সেতুর জন্য ৩৩৮ মিটার সেতুর ডিজাইন পাস হয়েছে। সেতুটি নির্মাণ করতে আনুমানিক একশত কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে টেন্ডারসহ বাকি কার্যক্রম শুরু করার আশ্বাস দেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য