-->

রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে সুলতান শাহ পাহাড়

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে সুলতান শাহ পাহাড়
এভাবে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পুটিবিলার সুলতান শাহ পাহাড়

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় রাতের আঁধারে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে পুটিবিলার সুলতান শাহ পাহাড়। ডাম্পার গাড়ির মাধ্যমে গ্রামীণ কাঁচা সড়ক দিয়ে মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দূর-দূরান্তে। এতে গ্রামীণ সড়কের অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লোহাগাড়ার পুটিবিলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপাড়া এলাকায় সুলতান শাহ পাহাড়টি অবস্থিত। পাহাড়টি প্রাচীন এবং প্রসিদ্ধ। দিদারুল আলম নামের এক ব্যক্তি পাহাড়টির মাটি কেটে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তিনি পুটিবিলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। তাই পাহাড়ের মাটি কাটার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু পাহাড়টির পশ্চিমাংশের ৮ শতক জায়গার মাটি কেটে ইতিমধ্যে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। স্ক্যাভেটরের সাহায্যে পাহাড়টির মাটি কাটা হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত ডাম্প ট্রাকের সাহায্যে মাটি পরিবহনের ফলে সুলতান শাহ্ সড়কটির অন্তত ৩০০ মিটার কর্দমাক্ত হয়ে যান চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, রিকশা ও সাইকেল চলাচল করাও অসম্ভব। সড়কটি দিয়ে চলাচল করেন নতুন পাড়া ও এর আশেপাশের এলাকার ৭ শতাধিক মানুষ। বর্তমানে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ৩ সপ্তাহ আগে পাহাড়টির মাটি কাটা শুরু করেন দিদারুল। সড়কটি মাটির হওয়ায় মাত্রাতিরিক্ত ডাম্পার ট্রাক চলাচলের ফলে সড়কটির এখন বেহাল অবস্থা। এর মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় সড়কের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে মাটি কাটা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, সড়ক যান চলাচলের উপযুক্ত হলে পুনরায় মাটি কাটা শুরু করবেন দিদারুল।

 

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুলতান শাহ্ একজন দরবেশ ছিলেন। পাকিস্তান শাসনামলে তিনি চট্টগ্রাম শহর থেকে লোহাগাড়ায় আসেন। পাহাড়টির উপরে তার একটি আস্তানা আছে। সেখানে তিনি জিকির ও ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। সেখানে বার্ষিক ওরশ হতো। পরবর্তীতে সরকার তাকে পাহাড়টির বন্দোবস্ত দেয়। ধীরে ধীরে পাহাড়টি সুলতান শাহ্ এর পাহাড় নামে পরিচিতি পায়।

 

আনুমানিক ১৯৭২ সালের দিকে সুলতান শাহের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে তার সন্তানদের কাছ থেকে স্থানীয় দিদারুল আলমসহ একাধিক ব্যক্তি পাহাড়টির মালিকানা কিনে নেন। বর্তমানে পাহাড়টির উপরে সুলতান শাহ্ এর আস্তানা এবং পাহাড়টির পূর্বপাশের পাদদেশে সুলতান শাহ্ এর নামে একটি জামে মসজিদ রয়েছে।

 

পাহাড় কাটার দায় অস্বীকার করে দিদারুল আলম বলেন, আমি এ পাহাড় কাটার সঙ্গে আমি জড়িত না। আমার ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। মূলত আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন বলেন, ১ মাস আগে সুলতান শাহ সড়কটি সংস্কার করা হয়েছে। অতিরিক্ত মাটি পরিবহনের ফলে বর্তমানে সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ। আমি ১ সপ্তাহ আগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।

 

পুটিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক বলেন, একদিকে পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশে ব্যাপক বিপর্যয় হচ্ছে । অন্যদিকে মাটি পরিবহনের কারণে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয়রা আমাকে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি আমি দেখছি। পাহাড় কাটায় জড়িত ব্যক্তি যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা প্রশাসনকে এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

উপজেলার বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মী সানজিদা রহমান বলেন, এ অঞ্চলের পাহাড় রক্ষা করা বর্তমানে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড় কাটা বন্ধে জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ বলেন, সুলতান শাহ্ পাহাড়টি কাটার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version