-->
শিরোনাম

বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর-ফসলি জমি প্লাবিত, আতঙ্কে হাজারো মানুষ

খুলনা ব্যুরো
বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর-ফসলি জমি প্লাবিত, আতঙ্কে হাজারো মানুষ
খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙন অব্যাহত রয়েছে

কপোতাক্ষ নদের ভাঙনকবলিত খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মামুদকাটি, রাড়ুলী ও বোয়ালিয়ার মালোপাড়ায় পাউবোর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। বিপৎসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় একাধিক স্থানের দুর্বল ও নিচু বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। শিবসা ও কপোতাক্ষ নদসহ পাইকগাছা উপজেলার নদনদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে গদাইপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়ার বাঁধ ভেঙে জেলেপল্লির ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

বাঁধ উপচে পৌর বাজারের কাঁকড়া মার্কেট, চিংড়ি বিপণন মার্কেট, মাছ বাজার, ফল বাজার ও সবজি বাজারে পানি উঠে যায়। এ ছাড়া হরিঢালী ইউনিয়নের হরিদাসকাটি, সোনাতনকাটি ও মাহমুদকাটি, রাড়ুলী ইউনিয়নের রাড়ুলীর জেলেপল্লী, লস্কর ইউনিয়নের আলমতলাসহ বিভিন্ন এলাকার ওয়াপদার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। এসব এলাকার অনেকগুলো স্থান অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষজন।

 

এ ছাড়া পোল্ডারের বাইরের অনেক চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ঘের মালিকরা। কপোতাক্ষ নদের প্রবল জোয়ারের চাপে মালোপাড়ার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়। পানি বৃদ্ধির আশঙ্কায় রাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন সহায়-সম্পদ সরিয়ে নেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াসিন আলী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে স্থানীয়দের নিয়ে বাঁধ সংস্কারের তোড়জোড় শুরু করেন।

 

নদী তীরবর্তী মানুষের আশঙ্কা, দ্রুত ভাঙনকবলিত হরিঢালীর মামুদকাটি, হাবিবনগর, দরগাহমহল, গদাইপুরের বোয়ালিয়া মালোপাড়া, গড়ইখালীর খুতখালী, লস্করের আলমতলা ও দেলুটির কালিনগরের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত না করলে যেকোনো মুহূর্তে অঘটন ঘটতে পারে।

 

জানা গেছে, কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে রাড়ুলী ইউনিয়নের মালোপাড়ায় আটশ মিটার, গদাইপুরের বোয়ালিয়া মালোপাড়ায় প্রায় তিনশ মিটার, হরিঢালীর মামুদকাটিতে চারশ ১০ মিটার ও গড়ইখালীর খুতখালীতে প্রায় দুইশ মিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া হরিঢালীর দরগাহমহল, হাবিবনগর ও কপিলমুনির আগরঘাটা এলাকায় ভাঙনে ক্ষয়ক্ষতির ইতিহাস বহুদিনের।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভাঙনকবলিত বিভিন্ন স্থানে ৬০ দশকের তৈরি ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, আম্ফান ও ফনির প্রভাবে ভেঙে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বহু পরিবার সহায়-সম্পদ হারিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। সরকার নদীশাসন ও ভাঙন রোধে বিভিন্ন সময়ে অর্থ বরাদ্দ করে বাঁধ সংস্কার করলেও তা স্থায়ী ও কার্যকর হয়নি। এখন ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় শাখা প্রকৌশলী মো. রাজু হাওলাদার বলেন, ‘ভাঙনকবলিত বেড়িবাঁধে জিও ব্যাগ, মাটি ও বস্তা প্লেসিং করে পোল্ডার রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে রাড়ুলীর মালোপাড়ায় তিন কোটি ও বোয়ালিয়ায় ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছেন। এছাড়া খুতখালীতে ১৭০ মিটার বিকল্প বাঁধ দেয়া হয়েছে।’

 

গত ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় চলতি পূর্ণিমায় নদীভাঙন তীব্র হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ইউপি চেয়ারম্যানরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, ‘নদীভাঙনের অবস্থায় করণীয় সম্পর্কে পাউবোর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’ জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিত কয়েকটি স্থানের বেড়িবাঁধ সংস্কারে আগামী ৩ অক্টোবর টেন্ডার সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।

 

খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু এলাকায় নদীভাঙনের দীর্ঘদিনের সমস্যার কথা জানিয়ে এ মুহূর্তে পাউবোর সঙ্গে বাঁধ সংস্কারে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতে অর্থ বরাদ্দের তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাইকার ৫০ কোটি টাকা খুতখালীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও লস্করের বাইনতলায় স্লুইস গেট ও আলমতলায় বাঁধ নির্মাণে ব্যয় করা হবে।’

 

এদিকে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর কয়রার কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। ভোরে কপোতাক্ষ নদের ২ নম্বর কয়রা গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের ভাঙনরোধে পাউবোর দেয়া পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ ও বড় বড় মাটির খন্ড নিয়ে বেড়িবাঁধের ২০০ মিটার অংশ নদে ধসে পড়ে। ভাঙনে হুমকিতে পড়ে বাঁধসংলগ্ন ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ৮ হাজার মানুষ।

 

দ্রুত ভাঙনরোধে অবিলম্বে পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেয়া হলে প্রায় দুই হাজার একর আমনের ক্ষেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদের লোনাপানিতে ডুবে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। ২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবু মুসা ও আসলাম হোসেন বলেন, ‘মাত্র দুই বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। অথচ এরই মধ্যে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে।’

 

কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাঁধের ওই স্থান ভেঙে যায়। সেসময় পাউবো ওই বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। খুলনা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুহম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘কয়রার এসব বেড়িবাঁধ দুই বছর আগে জাইকার অর্থায়নে সাতক্ষীরা পাউবো নির্মাণ কাজ করে। খুলনা পাউবো সম্প্রতি দায়িত্ব পেয়েছে। তবে প্রশাসনিক জটিলতা এখনও কাটেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version