ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশ অংশেও তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ৯০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক পানি বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি রেকর্ড করা হয়েছে ২৯.০৫ মিটার। যা বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যার প্রভাব পড়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। এই উপজেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
এর আগে বুধবার থেকে নদী পাড়ের মানুষজনকে সতর্ক করে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দিনভর মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। তিস্তা নদী বেষ্টিত চর ও নিচু অঞ্চলের মানুষকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, পাড়া সাদুয়া, কানিচরিতা বাড়ি, রাঘব, কারেন্ট বাজার, বেলকা ইউনিয়নের তালুক বেলকা, জিগাবাড়ি, পঞ্চানন্দ পলাশতলা, বেলকা নবাবগঞ্জ ও কিশামত সদর, কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামেরচর, কাজিয়ারচর, পোড়ারচর, কেরানিরচর, রাজার চর, মিন্টু মিয়ার চরসহ তারাপুর, চন্ডিপুর ও কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
নদীর তীরবর্তী লোকজন জানান, হঠাৎ করে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বিপদে পড়ে গেছি। অনেক কষ্ট করে জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল লাগিয়েছি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
উপজেলার চরচরিতা বাড়ি গ্রামের মিন্টু মিয়া বলেন, হঠাৎ করে বুধবার বিকেল থেকে তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে এই চরের বেশকিছু নিচু এলাকা ডুবে গেছে। দু-একদিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। বন্যার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব ধরনের প্রস্তুতি থাকার ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (এনডিসি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা) জুয়েল মিয়া নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বন্যার আগাম বার্তা জানাতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তারা তা বাস্তবায়ন করেছে। বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যেকোনো উপজেলা থেকে ২৪ ঘণ্টা সরাসরি সেখানে যোগাযোগ করা যাবে। পানিবন্দি মানুষদের সেবা দিতে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে সাথে ভলান্টিয়ার প্রস্তুত রয়েছে। একই সাথে আশ্রয়কেন্দ্র এবং ফ্লাডশেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি যোগাযোগের জন্য আধুনিক চারটি রেসকিউ বোট প্রস্তুত রয়েছে। বন্যাকালীন মানুষদের জন্য জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বন্যা স্থায়ী হলে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শিশু খাদ্যসহ খাদ্য সহায়তা এবং বন্যা শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য