-->
শিরোনাম

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাঁধে ২৯ হাজার মামলার বোঝা

ইব্রাহিম শেখ, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাঁধে ২৯ হাজার মামলার বোঝা
কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম

অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে জমেছে মামলার পাহাড়। গত দুই তিন যুগ ধরে জমে থাকা মামলার সংখ্যা ২৯ হাজারের অধিক। এই বিশাল সংখ্যক মামলার বোঝা নিয়ে টেনশনে রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কারণ এসব মামলার সঙ্গে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

 

কাস্টমস কর্তারা বলছেন, আইনগত দীর্ঘসূত্রতার কারণে বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে সরকারি রাজস্ব। অনেক আমদানিকারক কাস্টমসকে বিভ্রান্ত করতেও মামলা ঠুকে দেন। মামলার জট কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) কার্যক্রম শুরু করলেও আমদানিকারকদের অনাগ্রহের কারণে সেটি থমকে আছে।

 

কাস্টমসের আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আপিল বিভাগ, আপিলেট ট্রাইব্যুনাল, আপিল কমিশনারেট এবং উচ্চ আদালতে মোট ২৯ হাজার ২৮২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে ৯ হাজার ৩৩৮টি। সব মিলিয়ে মামলার সঙ্গে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ হচ্ছে ১০ হাজার ৭৯০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

 

জানা গেছে, আমদানিকৃত পণ্যের নথিতে কোনো ধরনের জালিয়াতি দেখলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ চালান আটক করে। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকির মামলা কিংবা জরিমানা করে। মিথ্যা ঘোষণা ও ভুল এইচএস কোড ব্যবহার করে পণ্য আমদানি করলেও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের বিরুদ্ধে মামলা করে থাকেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা। অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমসের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মামলা ঠুকে দেন আমদানিকারক। এতে আটকে যাচ্ছে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব।

 

কাস্টমসের কয়েকজন রাজস্ব কর্মকর্তা জানান, এডিআর শাখাতে আমদানিকারকদের উদ্বুব্ধ করে আনা যেত, তাহলে মামলার জট কিছুটা হলেও কমতো। আসলে এডিআরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারক উভয়পক্ষকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হলে কাস্টমস ও আমদানিকারক উভয়পক্ষ লাভবান হবে।

 

চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের বর্তমান সময়ে মামলার সংখ্যা কমে গেছে। তবে এখন যেসব মামলা রয়েছে এর মধ্যে ৩০-৪০ বছরের পুরানো মামলাও রয়েছে। গত অর্থবছরে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের সহায়তায় অনেকগুলো মামলা নিষ্পত্তি করেছি। আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেসব মামলা সরকারের পক্ষে রয়েছে, বিশেষ করে ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত মামলাগুলো আমরা নিস্পত্তি করব। আশা করছি চলতি অর্থবছরে মামলার সংখ্যা অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের মার্চে উচ্চ আদালত ও কাস্টমসের আপিল ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘদিন থেকে নিষ্পন্ন না হওয়া অবস্থায় রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেয় এনবিআর। তবে বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহযোগিতায় ২০১২ সালের জুলাই থেকে এডিআর পদ্ধতিটি গতি পায়।

 

এ পদ্ধতিতে আদালতের বাইরে আমদানিকারক এবং কাস্টমসের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একজন নিরপেক্ষ সহায়তাকারীর মাধ্যমে দ্রুত সময়ে মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করে থাকে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version