-->
শিরোনাম

দুই যুগেও নির্মাণ হয়নি বেড়িবাঁধ, শঙ্কায় স্থানীয়রা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
দুই যুগেও নির্মাণ হয়নি বেড়িবাঁধ, শঙ্কায় স্থানীয়রা
স্থায়ী বেড়িবাঁধ না থাকায় শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা। ছবিটি আশাশুনি উপজেলার দয়ারঘাট গ্রাম থেকে তোলা

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গড়িমসিতে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্মাণ হয়নি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট এলাকার বলাবাড়িয়া ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ। ফলে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি আটকানো হচ্ছে মৎস্যঘেরের সরু রিংবাঁধ দিয়ে। যেকোনো সময় এই বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে দয়ারঘাটসহ আশপাশের এলাকা। স্থানীয়দের দাবি দ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের।

 

উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে দয়ারঘাট গ্রামের নিমাই মন্ডলের বাড়ি থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের সুনীল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫০ মিটার খোলপেটুয়া নদীতে কোনো বেড়িবাঁধ নেই। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে বলাবাড়িয়া ও দয়ারঘাট গ্রামের মাঝামাঝি জলকপাট-সংলগ্ন এলাকায় খোলপেটুয় নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদর, পার্শ্ববর্তী শ্রীউলাসহ কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। এ সময় ভেসে যায় বসতবাড়িসহ শত শত মৎস্যঘের।

 

জোয়ার-ভাটার কারণে জলকপাট-সংলগ্ন এলাকা ভেঙে গভীর খালের সৃষ্টি হয়। পরে এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি ঘিরে রিংবাঁধের মাধ্যমে জোয়ারের পানি আটকে দেয়া হয়। এর ১০ বছর পর ২০০৫ সালে মূল বাঁধ থেকে সরে চুক্তির ভিত্তিতে ওই ২ হাজার বিঘা জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন খুলনার ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার। তৎকালীন মৎস্য ঘেরের বাঁধটি আজও বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নেয়নি পাউবো।

 

২০২০ সালে আম্ফানে ওই এলাকায় রিংবাঁধের ৪টি পয়েন্টে ভেঙে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। এতে বসতবাড়িসহ শতাধিক মৎস্যঘের প্লাবিত হয়। এরপরও টনক নড়েনি পাউবো কর্তৃপক্ষের।

 

আশাশুনি সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট গ্রামের রনজিত বৈদ্য বলেন, ‘গত আম্ফানের জলোচ্ছাসের নিচু রিংবাঁধ ছাপিয়ে ও ভেঙে জোয়ারের পানি ভেতরে ঢুকে শত শত মৎস্যঘের তলিয়ে যায়। ৬৫০ মিটারের মধ্যে আরও চার জায়গায় ভেঙে জোয়ার-ভাটা চলতে থাকে। এক মাস ধরে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদরে যাতায়াতে সমস্যা হয়। কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল, রোগীসহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বলাবাড়িয়ায় যাতায়াতের কোনো সরকারি রাস্তা নেই। এখানে দ্রুত স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’

 

স্থানীয় সাংবাদিক সমীর রায় বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে এ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। অথচ আমাদের গ্রামসহ আশপাশে যত গ্রাম আছে সব গ্রামেই চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। কোটি কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চললেও এ এলাকার মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি।’ বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এ গ্রামে তিন চাকার ভ্যানও ঢুকতে পারে না। যাদের মোটরসাইকেল আছে, বর্ষা মৌসুমে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসতে হয়।’

 

আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী বলেন, ‘জমি জটিলতায় দুই বছরে বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুল হকের তৎপরতায় কিছুদিন আগে জায়কা দয়ারঘাট বলাবাড়িয়া এলাকায় নির্দিষ্ট সীমানায় ৫৫০ মিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধে মাপজোক হয়েছে। আগামী বছর দরপত্র আহব্বান করা হবে বলে আশা করছি।’

 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনি আলম নূর বলেন, ‘এখানে নতুন যোগদান করায় বিস্তারিত বলতে পারছি না।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডেও সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন তিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, ‘দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া বেড়িবাঁধের বিষয়টা আপনার মাধ্যমে জানলাম।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version