-->
শিরোনাম

টানা বৃষ্টিতে জমির ফসল নিমজ্জিত, শঙ্কায় কৃষক

বগুড়া প্রতিনিধি
টানা বৃষ্টিতে জমির ফসল নিমজ্জিত, শঙ্কায় কৃষক
বৃষ্টিতে বগুড়ায় কৃষি জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে

গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। কৃষকরা আশঙ্কা করছেন, পানিতে ডুবে থাকায় তাদের আবাদকৃত সবজির ক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন জেলার কৃষকরা। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে বাজারে।

 

বগুড়ার কয়েকটি উপজেলায় খোঁজ নিয়ে এমন পরিস্থিতি জানা যায়। জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক শাহআলম জানান, গত ৩ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বগুড়ায় ১৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ৫ সেপ্টেম্বর বৃষ্টিপাত হয় ১৩৪ মিলিমিটার। বৃষ্টির প্রভাব ধীরে ধীরে কমে আসছে। আরও দুদিন থাকতে পারে।

 

জেলার কৃষি বিভাগ থেকেও বৃষ্টিতে ফসল আক্রান্তের খবর জানিয়েছে। দপ্তরটি বলছে টানা বৃষ্টিপাতে বগুড়ার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে সবজির ক্ষেত রয়েছে একশ হেক্টর। রোপা আমন ৮০০ হেক্টর, মাসকালাই ৩৪ ও মরিচের ২৬ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। ফসল আক্রান্তের এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

 

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার শেরপুর, নন্দীগ্রাম, সারিয়াকান্দি, ধুনট ও গাবতলী উপজেলায় এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তবে মাঠের চিত্র আরও খারাপ। বিশেষ করে সবজির ক্ষেতে পানি নেমে গেলেও গাছগুলো বাঁচানো সম্ভব হবে না। এ কথা জানান শাজাহানপুর উপজেলার কাটাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। তার ২৭ শতক জমিতে চাষ করা শিম, লাউ ও করলা পানিতে ডুবে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রায় বারো হাজার টাকা খরচ করে সবজির আবাদ করলাম। ফলন আসলে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় হতো। কিন্তু এখন আর হবে না। পানি জমেছে গাছের গোড়ায়। এগুলো মরে যাবে। নতুন করে এই সবজির চারা লাগানোর সময়ও শেষ।

 

এ এলাকার প্রায় সব জমি পানিতে ডুবে আছে। কোথাও গোড়ালি পানি। কোথাও হাঁটু পর্যন্ত। অনেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচে গাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন। পাশের নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল এলাকার মহিদুল ইসলামের সবজির জমিতে পানি জমেছে। তিনি জানান, বৃষ্টি এখনও থামেনি। এভাবে আর দুই দিন চললে এই গাছগুলো মরে যাবে। পাতাকপি করেছিলাম দশ শতকে। সেটিও নষ্ট হয়ে যাবে। পানি নেমে গেলে অন্য কিছু চাষ করে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হবে।

 

ক্ষতির কাতারে আছেন অনেক আমন চাষি। গাবতলীর নেপালতলী গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর দুই বিঘা জমিতে আমন চাষ করি। এবার বৃষ্টির অভাবে ধানের চারা নষ্ট হয়েছিল। এজন্য ধান রোপণেও দেরি হলো। এখন আবার বৃষ্টি হয়ে সব ধান ডুবে গেল। এই সময়ের পানি ধানের জন্য ক্ষতিকর। গাছ বড় হয়ে গেলে ঝামেলা ছিল না।

 

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির মোকাম মহাস্থানহাটের পাইকারি ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃষ্টির প্রভাবে সবজির বাজারের অবস্থা খারাপ। প্রতি কেজি ১২০ টাকার মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে বেগুন ছিল ৮০০-এক হাজার টাকা মণ। আজকের হাটে বিক্রি হয়েছে ২২শ টাকা মণ। পটল ও মূলা ছিল ১২শ টাকা মণ। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬শ-১৭শ টাকা মণ। তাও মূলা বাইরের পার্টি এখন কেউ নিচ্ছে না। আবার জমিতে থাকলেও পচে যাবে।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, আকস্মিক বৃষ্টিতে বগুড়ায় ৯৯৯ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ থেকে আমন ধানের ক্ষতি তেমন হবে না। ধান প্রায় ১৫ দিন পর্যন্ত পানিতে থাকতে পারে। তবে সবজি পানি সহ্য করতে পারে না। এগুলোর ক্ষতি হবে। ফসলের বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতি আরও কয়েকদিন পর জানা যাবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version