দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা। দেশের চালের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এ উপজেলা। পাশাপাশি পটোল, বেগুন, করলা, মরিচ, লাউ, মিষ্টিকুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদনেও জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করে থাকে।
কিন্তু বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার সদর ইউপির তেজাপাড়া, কাদিবাড়ি, চাংলা পূর্বপাড়া ও বালুভরা ইউপির কোমারপুর মৌজার প্রায় ৫০০ বিঘা জমি অনাবাদি থাকে। ফলে রোপা আমন ধান আবাদ করতে পারেন না কৃষকরা। এতে এক মৌসুমে ক্ষতি প্রায় কোটি টাকা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪,৩৫০ হেক্টর জমি। আর সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১,১৩০ হেক্টর জমি।
এলাকাবাসী জানায়, তেজাপাড়া, কাদিবাড়ী, জিধিরপুর, কোমারপুর ও চাংলা পূর্বপাড়া ৫ গ্রামের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি পুরো বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ থাকে। আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলীর বাড়ির পাশ দিয়ে একটি ড্রেন নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করে দিলে খুব সহজেই পানি নিষ্কাশিত হবে। আর ৫০০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ হবে রোপা আমন। তারা আরো জানায়, বিঘাপ্রতি রোপা আমন ধানের ফলন হয় ১৮ থেকে ২০ মণ। যার দাম হয় মণপ্রতি ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা। সেই হিসাবে যার মূল্য প্রায় কোটি টাকা।
তেজাপাড়া গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন ও বাবর আলী বলেন, এই মাঠে আমাদের ৩ শরিকের ১০০ বিঘা জমি আছে। এই জমিগুলোতে শুধু বোরো ধান আবাদ হয়। জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধান লাগাতেই পারি না। অনেক সময় বর্ষা তাড়াতাড়ি শুরু হলে বোরো ধান কেটে ঘরেও তুলতে পারি না। বাধ্য হয়ে আমি ৫টি পুকুর খনন করেছি। তারা আরো বলেন, ৩০ বছর পূর্বে চাংলা গ্রামের ভেতর দিয়ে একটি ড্রেন ছিল। যার মাধ্যমে এই মৌজার পানি নিষ্কাশন হয়ে বারাতলের ভেতর দিয়ে ভরট্ট বিলে চলে যেত। কিন্তু জমির মালিকরা পর্যায়ক্রমে ড্রেনগুলো বন্ধ করে দেয়ার কারণে এখন মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
ফলে ৩ ফসলি জমি এখন ১ ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে ৩০০/৩৫০ ফিট পূর্বে নদীর সঙ্গে একটি ড্রেন সংযুক্ত করে দিলে পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশন হবে এবং আমরা আগের মতো তিনটি ফসল আবাদ করতে পারব। কাদিবাড়ী গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, বর্তমানে আমার ৫ বিঘা জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এই জমি চাষাবাদ করেই আমার সংসার চলে।
জমিতে পানি জমে না থাকলে আমি এখানে তিনটি ফসল করতে পারতাম এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতাম। চাংলা পূর্বপাড়া গ্রামের সবুজ হোসেন বলেন, আমি ৮ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। বিঘাপ্রতি ১০ মণ হারে জমির মালিককে ধান দিতে হয়। খরচ বাদ দিলে কিছুই থাকে না। পানি জমে না থাকলে একাধিক ফসল চাষাবাদ করতে পারতাম। তাহলে বছর শেষে কিছু টাকা জমা করতে পারতাম।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ফিরোজুল ইসলাম জানান, তেজাপাড়া, কাদিবাড়ী, চাংলা পূর্বপাড়া ও কোমারপুর মৌজার প্রায় ৬০ একর জমি ধান রোপণের আগেই বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে ওই জমিগুলোতে ধান রোপণ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে ধান, গম, পাট, ভুট্টাসহ সকল ফসলই উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বদলগাছী জোনের সহকারী প্রকৌশলী জনাব মো. মোশাব আলী বলেন, জলাবদ্ধ জায়গাটা আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসী আমাদের নিকট আবেদন জমা দিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রকল্প প্রণয়নের প্রস্তাব সুপারিশ সহকারে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলব।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য