-->
শিরোনাম

দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-পরিবহনে সংকট, লোকসানে লঞ্চ মালিকরা

বরিশাল ব্যুরো
দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-পরিবহনে সংকট, লোকসানে লঞ্চ মালিকরা
ঘাটে অপেক্ষমান ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ সুরভি-৯

পদ্মা সেতুর সুফলে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্য ফিরলেও মুখ থুবড়ে পড়েছে ঢাকা-বরিশাল রুটের নৌ-পরিবহন সেবা। যাত্রী সংকট কাটিয়ে ওঠার একের পর এক চেষ্টা করেও সুফল পাচ্ছেন না বরিশালের লঞ্চ মালিকরা। রোটেশন প্রথা চালু করে প্রতিদিন মাত্র দুটি লঞ্চ চলাচলের সিডিউল নির্ধারণ হলেও যথেষ্ট যাত্রী হচ্ছে না। এমন অবস্থায় বেশিরভাগ লঞ্চ মালিকরাই লোকসান গুণে আগ্রহ হারাচ্ছেন এ ব্যবসা থেকে।

 

যাত্রী না থাকায় নৌ পরিবহন সেবার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শ্রেণির কর্মজীবী মানুষরা প্রায় আয় শূন্য হয়ে পড়ছে। পারাবত-১২ লঞ্চের ম্যানেজার সিহাব হাচান বলেন, বর্তমানে যাত্রী খুবই কম। আমরা প্রতিদিনই লস দিচ্ছি। আমরা মনে করি ৬০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে। আমার লঞ্চে মোট কেবিন রয়েছে ২৬১টি, ভিআইপি কেবিন রয়েছে ৭টি। এর অধিকাংশই এখন খালি থাকে।

 

অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের স্টাফ আলতাফ মাহাবুব বলেন, আগে যে যাত্রী হতো তার ৫ ভাগের ১ ভাগ যাত্রীও এখন হচ্ছে না। ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। প্রতিটি লঞ্চ মালিক বেহাল দশায় রয়েছেন। এছাড়া স্টাফদের অবস্থাও বেশ শোচনীয়। পূর্বে যাত্রীদের ভিড় ছিল। আয় হতো বেশ ভালই। তবে এখন পুরোপুরি বেতন নির্ভর হতে হচ্ছে। সীমিত বেতনে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

 

বিভিন্ন লঞ্চে ফেরি করে ঝালমুড়ি বিক্রি করা বৃদ্ধ আলতাফ হোসেন বলেন, বেচাকেনার অবস্থা খুবই খারাপ। লঞ্চের যাত্রীদের ওপর নির্ভর করেই আমার সংসার চলত। এখন যাত্রী নেই, বেচাকেনা করব কার কাছে। আগে দশটি লঞ্চ ছেড়ে যেত। দশটি লঞ্চে ১০ জন করে ফেরি করলেও ১০০ লোকের জীবিকার ব্যবস্থা হতো। কিন্তু এখন লঞ্চ ছাড়ে দুটি। এতে যাত্রী থাকে খুবই কম। তাই আমাদের মধ্যে অনেকেই এখানে ফেরি করা বাদ দিয়েছেন।

 

লঞ্চ মালিক সমিতি কেন্দ্রিয় কমিটির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যাত্রী স্বল্পতার কারণে কয়েকটি লঞ্চ তাদের সার্ভিস বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে যারা লোকসান দিয়েও রুটে টিকে আছে তারা রোটেশন প্রথা মেনে চলছেন। এতেও লোকসান কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি থাকলে উভয় প্রান্ত থেকে মাত্র একটি করে লঞ্চ চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে।

 

বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পদ্মা সেতু পার হয়ে কয়েক ঘণ্টায় মানুষ ঢাকা, বরিশালসহ অন্যান্য জেলায় যাতায়াত করতে পারছেন। বরিশাল থেকে ঢাকায় ৩/৪ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। মানুষ এ কারণে লঞ্চে সময় অপচয় করে যেতে চাচ্ছেন না। যাত্রী সংকটের কারণে বরিশালের ১২টি রুটের অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছ। যে হারে যাত্রী কমছে তাতে বরিশাল রুট কত দিন চালু থাকে তা নিয়ে শঙ্কিত আমরা।

 

এদিকে, যাত্রী সংঙ্কটে গত আড়াই মাস ধরে আমতলী-ঢাকা রুটে নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চ যাত্রী ও অল্প খরচে মালামাল আনা-নেয়ার নিরাপদ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পরেছে। এর প্রভাব পড়ছে দ্রব্য মূল্যের উপরে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version