-->
শিরোনাম

ভারী বর্ষণে প্লাবিত কৃষিজমি, কৃষকের মাথায় হাত

হুমায়ুন রশিদ জুয়েল, কিশোরগঞ্জ
ভারী বর্ষণে প্লাবিত কৃষিজমি, কৃষকের মাথায় হাত
কিশোরগঞ্জে ভারী বর্ষণে ভেঙে গেছে সড়ক

কিশোরগঞ্জে টানা ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে কৃষিজমিসহ শত সহস্র ফিসারি। একদিকে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন ধূলিসাৎ আর কান্নার আহাজারি অন্যদিকে নতুন পানিতে চলছে মাছ শিকারের মহোৎসব। রোপা-আমন মৌসুমে এই ভারী বর্ষণের কারণে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

 

ইটনা উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৮৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উজান থেকে নেমে আসা পানি আর কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলে ৫১০ হেক্টর জমির রোপাধান পানিতে তলিয়ে গেছে।

 

ইটনা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বি ধান ২৯-১৩৫ হেক্টর জমিতে বি ধান ৪৯-২২৫ হেক্টর জমিতে বি ৮৭-২০ হেক্টর জমিতে বি ধান ২২-৩৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা করা হয়েছিল। যা থেকে ২৯০৫ টন চাল উৎপাদন হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছিল।

 

কৃষক নূরু মিয়া বলেন, আমার ৫০ শতক জমিতে রোপা রোপণ করেছিলাম সব জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ইটনা উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাহবুব ইকবাল বলেন, হঠাৎ ভারী বর্ষণে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে।

 

রোপা-আমন মৌসুমে কিশোরগঞ্জ তাড়াইলে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ এক দিন আগেও ছিল চারিদিকে সবুজের সমারোহ। দূর থেকে দেখে মনে হয়েছিল, আমন ধানে সবুজ শীতল পাটিতে বিছিয়ে রেখেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সমতল ও অসমতল ভূমি। মৃদু হাওয়ায় ধানের সবুজ চারার গায়ে লেগে হেলেদুলে নাড়া দিচ্ছিল। যেদিকেই তাকানো হতো, সেই দিকেই সবুজের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সবুজ ধানে প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজেছিল। শ্রাবণে নির্মল আকাশ ও সবুজের সমারোহে এ ধরা যেন নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতি ও শুক্রবারের ভারী বৃষ্টিপাত মরণ কামড় দিয়েছে কৃষকের পেটে।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ৩নং ধলা, ৪নং জাওয়ার, ৫নং দামিহা, ৬নং দিগদাইড়, ৭নং তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া ১নং তালজাঙ্গা, ২নং রাউতি ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমি পানির নিচে।

 

জাওয়ার ইউনিয়নের কৃষক বাহার উদ্দিন বলেন, আমি ৪০ কাটা জমি রোপণ করেছি এক সপ্তাহ হলো। কিন্তু আজ সব পানির নিচে। আমি সর্বহারা হয়ে গেলাম। ধলা ইউনিয়নের জুয়েল মিয়া বলেন, ৮০ কাঠা জমির মধ্যে ৬০ কাঠা জমি রোপণ কাজ শেষ হয়েছিল, বাকি জমি রোপণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সকল জমিই এখন পানির নিচে। তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়নের উজ্জল ভূঞা বলেন, কয়েকটি বন মিলিয়ে আমার প্রায় ২ একর জমিতে ধান রোপণ হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির পানি সব শেষ করে দিয়েছে। এভাবে আরো অনেক কৃষক তাদের চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার সম্বল পানির নিচে ভাসছে।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছে কৃষক। এ বছর হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। কিন্তু অর্জিত হয়েছে ৭ হাজার ৭শ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আমন রোপণ হয়েছে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা জানান, আবহাওয়ার কারণে মাঠের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে রোপা-আমন ধান ৮৭০ হেক্টর এবং অন্যান্য ৩০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এমন একটি রিপোর্ট আপাতত তৈরি করেছি। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার টানা বৃষ্টিতে পুকুর, মাঠ ঘাট সবই তলিয়ে যায়। এতে করে চাষকৃত পুকুরের মাছ চারদিকের পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসব মাছ ধরে ব্যস্ত সময় পার করছে স্থানীয়রা।

 

উপজেলার কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের শত শত মানুষ মাছ শিকারে ব্যস্ত। কেউ জাল পেতে বসে আছেন, আবার কেউ বর্শি ফেলে বসে আছেন। এসব বর্শি ও জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুই, কাতল, তেলাপিয়াসহ নানা জাতের দেশীয় মাছ।

 

উপজেলার ঢেকিয়া, ধূলজুরী, বর্শিকুড়া, দ.পুমদী, দরিয়াবাদ, গোবিন্দপুর, নিরাহারগাতী, বিলচাতল, জামাইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চাষকৃত ফিশারির পার্শ্ববর্তী ধানক্ষেত ও বিলে মানুষ মাছ শিকারে ব্যস্ত। ধূলজুরী গ্রামের কাঠমিস্ত্রী খোকন মিয়া জানান, তিনি এ পর্যন্ত দুদিনে নিজের খাবারের জন্য রেখেও প্রায় তিন হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন।

 

বর্শিকুড়া গ্রামের দুলাল মিয়া জানান, প্রায় বিশ হাজার টাকার মাছ মেরেছে। দ. পুমদী গ্রামের টিটু মিয়া বলেন, জাহী জাল দিয়ে এই বৃষ্টিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মাছ ধরেছে।

 

ডাহরা গ্রামের সঞ্জিত চন্দ্র শীল জানান, তিনি বছরে মাঝে মাঝে জাল ফেলে মাছ ধরেন। তবে এবারের মাছ ধরার চিত্র ভিন্ন। জাল ফেললেই বড় বড় মাছ ও মাছের পোনা উঠছে। বিলচাতল গ্রামের কয়েকজন জানান, এ বছরের মতো পানি গত ৩০ বছরেও হয়নি। ওই এলাকার একেক জন প্রায় এক মণ দুই মণ মাছ শিকার করেছেন।

 

এদিকে, বিভিন্ন এলাকায় সস্তা দামে মাছ বিক্রি করতেও দেখা গেছে অনেককে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version