-->
শিরোনাম

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ

বরিশাল ব্যুরো
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার এই সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে

বরিশাল জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদী উপজেলা। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক এই উপজেলার ওপর দিয়ে গেছে। উপজেলার খাঞ্জাপুর, ইল্লা, গাইনেরপাড়, বার্থী, কটকস্থল, টরকী, গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড, আশোকাঠী, কাসেমাবাদ, মাহিলাড়া, বামরাইল, সানুহার, নতুন শিকারপুর, ইচলাদী, নতুনহাট, রহমতপুর ব্রিজ, রেইনট্রিতলা, কাশিপুর ব্র্যাক অফিস মোড়সহ অনেক স্থানই দুর্ঘটনার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

 

কিন্তু এসব স্পটের তালিকা নেই সরকারি কোনো দপ্তরের কাছে। এমনকি জনসচেতনতায় নেই কোনো সাইনবোর্ড। এর ফলে সড়ক পারাপার, পরিবহনে যাতায়াতে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। এই মহাসড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আশীর্বাদ হয়ে এলেও ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের পরের সড়ক প্রশস্ত নয়। ফলে অপ্রশস্ত সড়কে পরিবহন চালকদের প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়া গতিতে ওভারটেকিং করতে গিয়ে উল্লিখিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো এখন মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

জানা গেছে, দীর্ঘদিনের ২৪ ফুট প্রশস্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে দেশের সর্বদক্ষিণের সাগরকন্যা কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কের প্রশস্ততা না বাড়ানোর কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও অতি সম্প্রতি বাসস্ট্যান্ডসহ মহাসড়কের বিভিন্ন বাঁকা মোড় সোজা করতে কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। পাশাপাশি ভাঙা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত জাতীয় এ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষে মহাসড়কের পাশের শত বছরের গাছগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে কর্তন করা শুরু হয়েছে।

 

বরিশাল জেলার ‘সচেতন নাগরিক কমিটি’র সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের পরের সড়ক প্রশস্ত না করায় দুর্ঘটনা নিয়মিত লেগেই রয়েছে। আমাদের সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার দরুণ কোনো কিছুর সঠিক সমাধান হচ্ছে না। এরা একে অন্যকে দোষারোপ করে দায়মুক্ত হচ্ছেন।

 

বরিশাল জেলার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর আহব্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ করল সরকার। কিন্তু তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এই আইন বাস্তবায়ন হলে সব প্রতিষ্ঠান জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। তখন গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় সামনে চলে আসবে। এতে দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

 

গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি মো. গোলাম রসুল বলেন, হাইওয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধানে থাকা গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া নতুনহাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটারের সড়কে বেপরোয়া গাড়ি এবং পথচারীদের অসচেতনতায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। একই স্থানে অনেকবার দুর্ঘটনাও ঘটছে। তবে কোন কোন এলাকা দুর্ঘটনাপ্রবণ তা আমরা শনাক্ত করিনি।

 

বিআরটিএ বরিশালের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. রুকনুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিয়মিত সড়কে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া চালক, হেলপার এবং পথচারীদের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানো হচ্ছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পরিবহনগুলোর বেপরোয়াগতি ও ওভারটেকিং বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতা না বাড়লে দুর্ঘটনার কমানো যাবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

 

তিনি আরও বলেন, গাড়ির ফিটনেস, লাইসেন্স নিয়ে বিআরটিএ কাজ করে। এসবের আইন অমান্য করে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করে বিআরটিএ। তবে কোন কোন স্থান ঝুঁকিপূর্ণ তা আসলে আমাদের শনাক্ত করার সুযোগ নেই। সাধারণত যে প্রতিষ্ঠানের আওতায় যতটুকু সড়ক-মহাসড়ক থাকে যেমন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ তারাই ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক শনাক্ত করে থাকে।

 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটুয়াখালী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিক উল্যাহ বলেন, আমরা সড়কের মান উন্নয়নে অর্থাৎ ভেঙে যাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সড়ক সংস্কার করে থাকি। তবে সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ কোনো স্থান বা এলাকা শনাক্তকরণের কোনো তথ্য জানা নেই। এমন কোনো তালিকাও আমাদের কাছে নেই।

 

৯৮ শতাংশ সড়ক তত্ত¡াবধানের বাইরে বরিশাল জোনের আওতায় রয়েছে ১৬০৩. ৯৪ কিলোমিটার সড়ক। যার মধ্যে রয়েছে ৩টি জাতীয় মহাসড়ক, ৭টি আঞ্চলিক মহাসড়ক ও ৬১টি জেলা মহাসড়ক। এই বিশাল দৈর্ঘ্যরে সড়কের মধ্যে মাত্র ৩২ কিলোমিটারের একটু বেশি মহাসড়ক দেখভাল করছে হাইওয়ে পুলিশ।

 

সূত্রমতে, বরিশাল বিভাগের বরিশাল ও পটুয়াখালী দুটি সড়ক সার্কেলে বিভক্ত। এর মধ্যে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও ভোলা জেলার সড়ক মিলিয়ে বরিশাল সড়ক সার্কেল এবং পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সড়ক মিলিয়ে পটুয়াখালী সড়ক সার্কেল গঠিত। দুই সার্কেলের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ৯৪ কিলোমিটারের মধ্যে বরগুনা ও পিরোজপুর ব্যতীত চার জেলায় মোট জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে ১২৭ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার।

 

এ ছাড়া ছয় জেলায় আঞ্চলিক মহাসড়ক রয়েছে ২৯০ দশমিক ৯ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়ক রয়েছে ১ হাজার ১৮৫ দশমিক ৯১ কিলোমিটার। এর মধ্যে হাইওয়ে পুলিশ মাদারীপুর জোনের আওতায় রয়েছে বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার ভুরঘাটা থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া নতুনহাট পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটারের বেশ কিছু অংশ সড়ক।

 

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বরিশাল বিভাগে গাড়ির চাপ পূর্বের তুলনায় চারগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় একমাত্র গৌরনদী হাইওয়ে থানা পুলিশ তা সামলাতে পারছে না। তাদের আওতায় থাকা ৩২ কিলোমিটারের দায়িত্ব পালন করতেই তাদের প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয়। এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই বরিশাল জেলার আহব্বায়ক রুহুল আমিন বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক-মহাসড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা। হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি না থাকায় তা বহুগুণে বেড়েছে। দুর্ঘটনা কিংবা বেপরোয়াগতি সামলাতে হলে হাইওয়ে পুলিশের গুরুত্ব অপরিসীম।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৌরনদী হাইওয়ে থানায় মাত্র একটি পিকআপ ভ্যান ও দুটি মোটরসাইকেল রয়েছে। তবে নেই কোনো রেকার। আর যে পিকআপটি রয়েছে সেটিও লক্কড়-ঝক্কড় অবস্থা। গাড়িটির গতিসীমা ৪০ কিলোমিটারের ওপরে নিলেই ত্রুটি দেখা দেয়। পুরোনো এই গাড়িটি দিয়েই অধিক ও বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে তাদের আইনগত ব্যবস্থা নিতে হয়। সেক্ষেত্রে কেউ আইন কিংবা সিগন্যাল অমান্য করলে ধাওয়া দিয়ে তাদের ধরে আইনের আওতায় আনা অসম্ভব হয়ে পরে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version