-->
শিরোনাম

ফুলবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা চাষে সাফল্য

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
ফুলবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা চাষে সাফল্য
ফুলবাড়ীতে রহমত আলীর তেজপাতার বাগান

ফুলবাড়ীতে গতানুগতিকভাবে শস্য আবাদ হিসাবে ধান, গম, ভুট্টা, লিচু, আম, তুলা, সরিষা, আলু, মাল্টা ও কমলাসহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষাবাদ করে থাকেন কৃষকেরা। এবারেই প্রথম উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের আকিলাপাড়া গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে ১ একর ২০ শতক জমিতে তেজপাতার বাগান লাগিয়েছেন নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রহমত আলী। এরই মধ্যে তেজপাতার বাগানটি সাড়া ফেলেছে সারা উপজেলায়। প্রতিদিন স্থানীয় কৃষকের পাশাপাশি উৎসুক লোকজন তেজপাতার বাগান দেখতে ভিড় করছেন।

 

তেজপাতা বাগানে কাজের সাথে জড়িত রহমত আলীর ছোট ভাই রাশেদ মাহমুদ জন, আমার বড় ভাই ২০০৯ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পিটি অফিসারের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তার নিজ গ্রাম আকিলাপাড়ায় অবসর জীবনযাপনের পাশাপাশি শুরু করেন বিভিন্ন প্রকার ফসল ও শাকসবজি চাষাবাদ। বর্তমানে তেজপাতার ক্রমান্বয়ে চাহিদা ও দাম বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে ১ একর ২০ শতক জমিতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন তেজপাতা বাগান তৈরি। তিনি একযোগে ১ হাজার হাইব্রিড তেজপাতা গাছের চারা রোপণ করেছেন। এর দুই বছরের মধ্যেই প্রত্যেকটি গাছে ব্যাপক পরিমাণে পাতা গজায়। সেই পাতা সংগ্রহ এবং বাজারজাত করা শুরু করেন।

 

তেজপাতা বাগান মালিক রহমত আলী বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর চাকরি শেষে ২০০৯ সালে অবসরে যাওয়ার পর গ্রামে ফিরে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ শুরু করি। ইন্টারনেট দেখে বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতা চাষ করার কথা মাথায় আসে। আগে স্বল্প পরিসরে করলেও গত দুই বছর থেকে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় দেড় লাখ টাকার তেজপাতা বিক্রি করেছি। বছরখানেক আগে তেজপাতার বাগানের চারপাশে নতুন করে ৪শ সুপারির চারা লাগিয়েছি।

 

তিনি আরো বলেন, কিছুদিন আগে তেজপাতার গাছের ফাঁকে কিছু এলাচ ও দারুচিনির গাছও লাগিয়েছি। বর্তমানে বাগান তৈরিতে চারা কেনা থেকে রোপণ, গাছের যত্ন এবং সার, কীটনাশক ওষুধ ও বাগান শ্রমিক সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ফুলবাড়ীতে তেজপাতা বাগান আছে এবং এখানে তেজপাতা উৎপাদিত হয় এটি অনেক ব্যবসায়ীই জানে না। তাই উৎপাদিত তেজপাতা বাজারজাত করতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারি কৃষি বিভাগের সহায়তা পাওয়া গেলে তেজপাতা বাজারজাত করা সহজ হবে। প্রচার প্রসার বৃদ্ধি করা গেলে এই তেজপাতার বাগান থেকেই বিনিয়োগের চেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।

 

স্থানীয় কৃষক আব্দুল ওহাব বলেন, ফুলবাড়ীতে প্রথমবারের মতো তেজপাতা বাগান হয়েছে। আমরা তেজপাতার গাছ ও চারা রোপণের বিষয়ে বিভিন্নভাবে জানতে শুরু করেছি। সরকারি কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে, বাজারজাত করা সহজ ও দাম ভালো পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে উপজেলায় ব্যাপকহারে তেজপাতা বাগান গড়ে উঠবে। রহমত আলীর তেজপাতা বাগানের সফলতা দেখে আমি তেজপাতা বাগান করার চিন্তা করছি।

 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার জানান, রহমত আলীর তেজপাতা বাগানের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ফুলবাড়ী উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে তেজপাতার চাষ শুরু হয়েছে। তেজপাতা উপজেলার মসলার চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে।

 

তিনি আরও জানান, এ উপজেলায় মসলা ও ঔষধ গুণে সমাহার তেজপাতা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে তেজপাতা সংগ্রহ করা যায়। একটি তেজপাতা গাছ থেকে প্রতি বছর দুই থেকে তিন বার পাতা ভাঙা যায়। বর্তমানে বাজারে এক কেজি কাঁচা তেজপাতা ১১০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষক বেশ লাভবান হবেন।

 

সব ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ কৃষকদের সার্বিকভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। দিনাজপুরের মসলা গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হলে এই এলাকায় নতুন নতুন কৃষক আরও বেশি মসলা চাষে এগিয়ে আসবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version