‘জানালা খুললেই দুর্গন্ধ, ক্লাসে থাকা যায় না। পচা দুর্গন্ধে পেট ফুলে যায়, বমি আসে। স্কুলের বারান্দায় বের হলেও একই গন্ধ। মাঝেমধ্যে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে, স্কুলে আসতে ভয় লাগে। এমন কথাগুলো বলছিল দিনাজপুর শহরের দক্ষিণ বালুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থী আহনাজ জামান। ওই স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে পড়ে সে। শুধু আহনাজ জামানই নয়, এমন কথা জানাচ্ছিল একই শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার, শ্রেয়া, মালিহা, আবু বক্কর জাকারিয়াসহ অন্যান্য কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
দিনাজপুর শহরের দক্ষিণ বালুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষেই প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষ। আর দেয়ালের পাশেই পাকা সড়ক। বিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেঁষেই সড়কের পাশে জমে আছে বিশাল ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। মাঝখানে দেয়াল থাকলেও এই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ আর শ্রেণিকক্ষের দূরত্ব মাত্র পাঁচ-ছয় ফুট। আবর্জনার স্তূপের নানা রকম বর্জ্য শুধু প্রাক-প্রাথমিকের ওই শ্রেণিকক্ষই নয়, বিকট দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিদ্যালয়ে। একদিকে চরম দুর্গন্ধ আর অন্যদিকে আবর্জনার স্তূপে প্রায়ই কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে স্কুলের শ্রেণি কার্যক্রমও ব্যাহত হয় বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের সামনে এই ময়লা-আবর্জনাযুক্ত দুর্গন্ধময় পরিবেশ শুধু দক্ষিণ বালুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়। দিনাজপুর শহরের বেশির ভাগ বিদ্যালয়েরই এ অবস্থা। দিনাজপুর শহরের ঘাসিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ পৌর এলাকার ৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেশির ভাগেরই একই অবস্থা। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে এসব বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
দক্ষিণ বালুবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শোভা রানী রায় বলেন, বিদ্যালয় ঘেঁষেই দীর্ঘদিন থেকেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এলাকায় কোনো ডাস্টবিন না থাকায় এলাকার মানুষ এখানেই বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলে। পাশের ক্লিনিকের দূষিত বর্জ্যও ফেলা হয় এখানে। এলাকার মানুষকে বারবার নিষেধ করা হলেও কেউ তা মানছেন না। এসব ময়লা দুর্গন্ধ গোটা বিদ্যালয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে গত দুই মাস আগে দিনাজপুর পৌরসভায় লিখিতভাবে জানালেও কোনো কাজ হয়নি।
বিদ্যালয়ের সামনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা উল্লেখ করে দিনাজপুর সদরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় এলাকাবাসীদের বারংবার অবহিত করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী জানান, বিদ্যালয়ের সামনে দুর্গন্ধযুক্ত এই পরিবেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
বিদ্যালয় সংলগ্ন এসব ময়লা আবর্জনার কারণে শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও। দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. এ এইচ এম বোরহান-উল-ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, এই অস্বাস্থ্যকর পরিবারের জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পৌরবাসী নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা না ফেলার কারণে অনেক জায়গায় সমস্যা হচ্ছে। তবে, শহরে কিছু আধুনিক ডাস্টবিন স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। আর বিদ্যালয়ের সামনে ময়লা-আবর্জনা ফেলার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দেন পৌর মেয়র।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর পৌর এলাকায় মোট ৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে প্রায় ২৫ হাজার শিশু শিক্ষার্থী। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকায় এই ২৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য