-->
শিরোনাম

জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাটারি কারখানা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে লাখো মানুষ

সুশীল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাটারি কারখানা, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে লাখো মানুষ
বিষাক্ত সিসার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত

নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জের বিশ্ব রোড এলাকায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় জিইউজো নামে একটি ব্যাটারি কারখানার বিরুদ্ধে বিষাক্ত সিসা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ। জনবসতিপূর্ন এলাকায় বিষাক্ত সিসায় তৈরি ব্যাটারি কারখানার অনুমোদন দেয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উপর ক্ষোভে ফুসছেন এলাকাবাসী। বিষাক্ত সিসায় পরিবেশ দূষণের পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকা পালন করছে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিশ্বরোড জিইউজো ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড নামের ব্যাটারি কারখানাটি অবস্থিত। কারখানটির মালিক একজন চায়নিজ নাগরিকের মালিকানাধীন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে চাইনিজ নাগরিকের নাম গোপন করেন। কারখানাটির ব্যবস্থাপক এনামুল নামে একজন। বিশ্বরোড এলাকায় প্রায় কয়েক লাখ মানুষের বসবাস।

 

এছাড়া জিইউজো ব্যাটারি কারখানাটির পাশে এখলাস উদ্দিন ভুইয়া স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী লেখপড়া করে। কারখানাটির আশপাশে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। কারখানাটিতে প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করে। এ ব্যাটারি কারখানাতে ইজিবাইক, অটোরিকশা, ট্রাক, বাস ও মোটরসাইকেলের ব্যাটারি তৈরি করে। এ কারখানাটি ব্যাটারি তৈরিকে ক্ষতিকারক সিসা ব্যবহার করে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাটারি কারখানা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

 

কিন্তু কারখানা মালিকপক্ষ সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাটারি কারখানা স্থাপন করেন। এর আগে ২০২১ সালের ১২ জুলাই ক্ষতিকর সিসা ব্যবহার করে নিয়মবহির্ভূত ব্যাটারি তৈরি করায় জিইউজো ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেড কারখানা জরিমানা করে র‌্যাব-১১। জরিমানা করে তাদের সতর্ক করলেও তারা না সুধরিয়ে বিষাক্ত সিসা দিয়ে ব্যাটারি তৈরি অব্যাহত রেখেছে ওই কারখানাটি। কারখানাটির বিষাক্ত কালো ধোয়ার কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

 

এছাড়া ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির ফলে ফসলি জমিসহ বিভিন্ন গাছের মুকুল ঝরে পড়ে যাচ্ছে। আবার ফল ধরলেও তা বড় হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এলাকায় গাছের ফলও কম ধরছে এবং কোনো গাছে ফল দেখাই যায় না। আবার ফল ধরলেও তা ঝরে পড়ছে।

 

অভিযোগ রয়েছে, পুরাতন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি হয় পরে সেই সিসা দিয়ে পুনরায় ব্যাটারি তৈরি করে তারা। ফলে পরিবেশ হুমকির মুখে বলে এলাকাবাসীর দাবি। কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকায় লোকজনের দেখা দিয়েছে বিভিন্ন ধরনের অজানা রোগ। ছোট বড় সকলের দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট। কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করলে তাকে উল্টো হামলা মামলার শিকার হতে হয়।

 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই কারখানার চারপাশের বাড়ি টিনের তৈরি। সিসা তৈরির কারণে টিনগুলো ছিদ্র হয়ে গেছে। বিষাক্ত সিসা ব্যবহার করে ব্যাটারি তৈরি করার ফলে যে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়, তার ফলে ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জমির ফসল। ছড়াচ্ছে নানা রোগবালাই।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এই কারখানায় দিন- রাতে সিসা দিয়ে ব্যাটারি তৈরি হয়। এ সময় হাঁচি-কাশি লেগেই থাকে। কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের বেশিরভাগই কারখানার আশপাশেই থাকেন। শ্রমিকদের পাশাপাশি তাদের ছেলে মেয়েদের শ্বাস কষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। রাস্তার সঙ্গে ব্যাটারি কারখানা থাকায় ব্যাটারি থাকায় দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল সালাম বলেন, ব্যাটারি কারখানার কারণে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারিনা। ব্যাটারির সিসার গন্ধে সাধারণ মানুষ ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। কারখানার চুল্লি দিয়ে দিনে ৩-৪ বার কালো ধোয়া ছাড়া হয়। এ সময় ধোয়ার কারণে চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। দূর থেকে দেখে মনে হবে কুয়াশাচ্ছান্ন এলাকা। আর এ কারণে এলাকাটিতে সারাবছর যেন শীতকালের মতো কুয়াচ্ছন্ন হয়ে থাকে।

 

এ ব্যাপারে কারখানাটির ব্যবস্থাপক এনামুলের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আইভী ফেরদৌস বলেন, বিষাক্ত সিসার ধোঁয়া মানবদেহে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ক্যান্সার, ব্রেনে সমস্যাসহ নানা ধরনের জটিল রোগ মানবদেহে হতে পারে।

 

এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফয়সাল হক বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় আমার জানা নেই। যেহেতু জেনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, জিইউজো ব্যাটারি কারখানাটির অনুমোদন থাকলেও তাদের কারখানাটি দূষণ করার কারণে তাদের নোটিশ করার হয়েছে। আগামী সপ্তাহে তাদের নোটিসের শুনানি করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version