শস্য ও মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ। এই উপজেলার ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারদিকে বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যায়। থই থই পানি পেরিয়ে কোমলমতি প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীকে যেতে হয় বিদ্যালয়ে। স্কুলে যাওয়া-আসায় তাদের একমাত্র ভরসা ডিঙি নৌকা। এজন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন গুনতে হয় ১০ টাকা করে নৌকা ভাড়া।
তাড়াশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের সান্দুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রতিরাম চর-কুশাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাটাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের হামকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শেখ পাড়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীরা নৌকায় পারাপারের মাধ্যমে স্কুলে যাওয়া-আসা করেন। এমনকি অনেক স্কুলে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো রাস্তাও নেই।
স্থানীয়রা জানান, শুকনো মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে জমির সরু রাস্তা ও ডোবা-নালা পাড়ি দিয়ে হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করে শিক্ষার্থীরা। তবুও চলছে তাদের পাঠদান। শিক্ষার্থীরাও থেমে নেই। অদম্য স্পৃহা নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করেন ৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর বন্যার সময় তাদের যেতে হয় নৌকায়। এ নিয়ে অভিভাবকদেরও থাকতে হয় চিন্তায়।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা জানান, উপজেলার ৬টি বিদ্যালয়ের শিশুদের যাতায়াতের এমন করুণ অবস্থা কয়েক যুগ ধরেই। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাথায় নিয়েই কোমলমতি শিশুরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। তবে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১ থেকে ২টা বড় নৌকার ব্যবস্থা করলে বর্ষার শুরু থেকে পানি শুকানো পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতে অনেক সুবিধা হবে। এ কারণে প্রতিটি স্কুলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যাওয়া-আসার জন্য নৌকা দেয়ার দাবি জানান তারা।
উপজেলার শেখপাড়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌরভ হাসান জানায়, বন্যা ছাড়াও বৃষ্টির সময় এতটা পথ সরু রাস্তা আর ডোবা-নালা পাড়ি দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে। মাঝে মধ্যেই পা পিছলে কাদা পানিতে পড়ে বই-খাতা নষ্ট হয়। পোশাকও ভিজে যায়। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় তাদের খুব কষ্ট হয়। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় বিল পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক বাবা-মা তাদের বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেন।
শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া নৌকার মাঝি বরাত আলী বলেন, ঘাট থেকে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করি। মাঝেমধ্যে কিছু শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বের হতে দেরি করলে নৌকা ধরতে পারে না। আর ততক্ষণে অনেক শিক্ষার্থীর ক্লাস শেষ হয়ে যায়।
হামকুড়িয়া পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে চলনবিল অঞ্চল পানিতে ডুবে থাকে। নদীতে বন্যার পানি কমলেও খাল-বিল ও শাখা নদীতে পানি না কমায় বছরের বেশির ভাগ সময় নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোনো উপায় থাকে না। ছোট্ট নৌকায় চরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা। তবে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থী কম হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন তহবিল থেকে ২৫ হাজার টাকা ব্যয় করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নৌকা তৈরি করা হয়েছে।
মাগুরা বিনোদ ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান ম্যাগনেট বলেন, ইতিমধ্যে আমি হামকুড়িয়া পশ্চিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। এখন তো সেতু করা সম্ভব নয়। তবে পরবর্তীতে পানি কমলে সেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে নিয়মিত চলাচল করার একটা ব্যবস্থা করে দিব।
তাড়াশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুসাব্বির হোসেন বলেন, উপজেলার ৬টি প্রতিষ্ঠান চলনবিলের মধ্যে অবস্থিত। এ কারণে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নৌকায় পারাপার হতে হয়। ইতিমধ্যে প্রতিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ বছর একটি নৌকা তৈরি করা হয়েছে।
বাকি যে প্রতিষ্ঠানগুলোতে নৌকা নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানে দ্রুত নৌকার ব্যবস্থা করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য