বৃটিশ শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সেই সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দীক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথ প্রদর্শক হিসেবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর আবির্ভাব ঘটে কুমারখালির ছেঁউড়িয়াতে। মরমি সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের গানের মাঝেই লুকিয়ে আছে সৃষ্টির রহস্য।
সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক তার গানের মূলমন্ত্র। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের সংগীত আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এই মহান সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৩তম ত্রিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এই তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত।
‘মিলন হবে কত দিনে, আমার মনের মানুষের সনে’ ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ -লালনের এই গানের সুরে লালন মাজার চত্বরে লালন অনুসারিরা মাতোয়ারা হয়ে উঠেছেন। লালন ভক্ত ও অনুসারিরা দলে দলে দেশ-বিদেশ থেকে এসে লালন মাজার চত্বরে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে সামিনা টাঙ্গিয়ে বসে পড়েছেন। কেউবা লালন অডিটরিয়ামের নিচে আবার কেউ লালন মাজার চত্বরে বাগানের মধ্যে।
একতারা দো’তারা নিয়ে লালন ভক্তরা লালনের গানে মাতোয়ারা। তাদেরকে দেখার ও শোনার জন্য আবাল বৃদ্ধ, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ভিড় জমিয়েছেন। ইতোমধ্যেই সন্ধ্যায় শহরজুরে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়। এ উৎসবের একটা ভিত্তি হচ্ছে ঠিক এমনি এক দোলের দিনে লালন সাঁইজির আবির্ভাব ঘটেছিল ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর ঘাটে।
লালনভক্ত ও অনুসারীরা জানান, লালন ফকির তার জীবদ্দশায় প্রতি বছর তার শিষ্য ও অনুসারীদের নিয়ে দোল পূর্ণিমা তিথিতে দোল উৎসব ও সাধু সংঘের আয়োজন করতেন। সেই থেকে প্রতি বছর লালন সাঁইজির আখড়াবাড়িতে দোল উৎসব উপলক্ষে আয়োজন করা হয় সাধুসঙ্গ। তবে লালনের মূল ধারার যেসব সাধক এবং অনুসারীরা আসছেন তারা পরম্পরা মেনে ১৭ অক্টোবর দোল পূর্ণিমা তিথিতে সন্ধ্যায় অধিবাসের মাধ্যমে সাধুসঙ্গ শুরু করবেন।
পরের দিন ১৮ অক্টোবর দুপুরে পূর্ণ সেবার মাধ্যমে শেষ করবেন সাধুসঙ্গ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির উদ্যোগে লালনের কর্মময় জীবন ও দর্শন নিয়ে আলোচনা সভা, দেশি-বিদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
লালন একাডেমির আয়োজনে লালন স্মরণোৎসবে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব এর পাশাপাশি সাদা পোষাকে আছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।
১৮৯০ সালের ১ কার্তিক ভোরে এই মরমি সাধক বাউল সম্রাট দেহত্যাগ করেন এবং তার সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়। লালনের মৃত্যুর পর তারই ধারাবাহিকতায় দোল পূর্ণিমার অনুষ্ঠান হয়ে আসছে।
১৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় লালন একাডেমির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এহেতেশাম রেজার সভাপতিত্বে লালন মঞ্চের উদ্বোধনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, জাতীয় সংসদের সদস্য (কুষ্টিয়া-৩) ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহাবুব উল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদ সদস্য ( কুষ্টিয়া-১) আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান, সংসদ সদস্য (কুষ্টিয়া-৪) ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এএইচএম, আবদুর রকিব, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. সদর উদ্দিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর আলী, কুমারখালী পৌরসভার মেয়র মো. সামছুজ্জামান অরুনসহ কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, প্রফেসর ইংরাজি বিভাগ ও সাবেক উপ-উপাচার্জ, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মো. শাহিনুর রহমান। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, খাদেম, লালন মাজার লালন একাডেমির মোহাম্মদ আলী।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) ও সহসভাপতি লালন একাডেমি কুষ্টিয়া মোছা. শারমিন আখতার ও কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল। রাত সাড়ে ৮টায় লালন একাডেমির পরিবেশনায় সংগীত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য