-->

ইতিহাসের সাক্ষী আলেকজান্ডার ক্যাসেল

মীর বাবুল, ময়মনসিংহ
ইতিহাসের সাক্ষী আলেকজান্ডার ক্যাসেল
আলেকজান্ডার ক্যাসেল বা লোহার কুঠি

ময়মনসিংহের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলেকজান্ডার ক্যাসেল বা লোহার কুঠি। তবে এটি এখন আর আকর্ষণীয় অবস্থায় নেই। দিন যত যাচ্ছে, ততই জরাজীর্ণ হচ্ছে। যেকোনো সময় ধ্বংস হবে ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা। তাই দর্শনীয় স্থাপনাটি দ্রুত সংস্কারের দাবি ময়মনসিংহবাসীর।

 

নগরীর আদালত পাড়ায় অবস্থিত ক্যাসেলটিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে নেই কোনো প্রাচীর। আলেকজান্ডার ক্যাসেলের সদর দরজার দুই পাশে দুটি ভাস্কর্য ছিল। এগুলোর হাতসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিশ্চি‎হ্ন হয়ে গেছে। এগুলো দেখার জন্য কোনো লোক নেই। চারপাশের লোহার শৈল্পিক কারুকাজগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে।

 

মূল গেটে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে লোহার কুঠি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে সাধারণ মানুষকে সতর্কবার্তা দিয়েই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ। তবে এই সতর্কবার্তা গুরুত্ব না দেয়ায় স্কুলের ছেলেমেয়ে, অভিভাবকসহ দর্শনার্থীরা ভবনটির নিচে বসে থাকে। ফলে এটি ধ্বসে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

 

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৮৭৯ সালে ময়মনসিংহ জেলার শতবর্ষ উপলক্ষে আমন্ত্রণ জানানো হয় ব্রিটেনের তখনকার রাজা সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের স্ত্রী আলেকজান্ডারকে। তার নামেই এর নামকরণ হয় ‘আলেকজান্ডার ক্যাসেল’। এর নির্মাতা মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সুকান্ত সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। তিনি ব্রহ্মপুত্র নদের পারে শহরের আদালত এলাকায় প্রায় ২৭ একর জমির বাগানবাড়িতে সুরম্য এ অট্টালিকাটি নির্মাণ করেন। দ্বিতল এই ভবনের ছাদে অভ্র ও চুমকি ব্যবহার করে ভেতরটা ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। বহু গুণীজন ময়মনসিংহ সফরকালে এখানে এসে থেকেছেন।

 

১৯২৬ সালে সফরে এসে ভবনটিতে থেকেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। একই বছর আসেন মহাত্মা গান্ধী। আরো এসেছেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা, লর্ড কার্জন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ওয়াজেদ আলী খান পন্নীসহ অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব।

 

এটি তৈরিতে লোহার ব্যবহার বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ‘লোহার কুঠি’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। তবে বর্তমানে এটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে এ সীমানার ভেতর রয়েছে শিশু কানন কিন্ডার গার্টেন, ময়মনসিংহ গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ মোট সাতটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। একটি সীমানা প্রাচীরের ভেতর সাতটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও এই জমিটি এখনো খাসজমি হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে।

 

স্থানীয়রা জানান, বছরের পর বছর দাবির মুখেও সংস্কার হয়নি আলেকজান্ডার ক্যাসেল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটিকে রক্ষার জন্য কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ফলে সময়ের ব্যবধানে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

 

ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আপেল চৌধুরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সংরক্ষণ না করলে আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটবে না। সংস্কৃতির বিকাশ ছাড়া কোনো দেশ উন্নত হতে পারে না। ক্যাসেলটিকে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর পূরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করলেও সংস্কারের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

 

তিনি বলেন, এটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ফলে যারা একবার যারা জরাজীর্ণ অবস্থায় এটিকে দেখছেন দূর থেকে তারা আর আসতে চান না। স্থাপনাটি সংস্কার করে আকর্ষণীয় করতে পারলে দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা দেখতে আসবেন এবং ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে আগামী প্রজন্ম।

 

এ বিষয়ে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর ময়মনসিংহের কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আলেকজান্ডার ক্যাসেলটি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা আবেদন করেছি এটি সংস্কারের জন্য। অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা পেলে সংস্কার করা হবে। আশা করছি, দ্রুত সংষ্কার কাজ শুরু হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version