অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিত বাঁধ এবং সেতু নির্মাণের ফলে নেত্রকোনার মগড়া নদীটি হারিয়েছে তার স্বকীয়তা। এখন মগড়া নদী শুধুই একটি নাম ছাড়া আর কিছুই না। দখল হয়ে যাচ্ছে মগড়া নদীর তীর। নদীর দুই তীরে গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা।
মগড়া নদী ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ঢাকুয়ার ভেতর দিয়ে সরাসরি পূর্বদিকে ধলাই নামে প্রবাহিত হয়েছে। নেত্রকোনার পূর্বধলার হোগলা বাজারের পাশ দিয়ে পূর্বধলা সদরের ভেতর দিয়ে ত্রি-মোহনীতে এসে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। সেই স্থান থেকে এটি মগড়া নদী নামে পরিচিত। ত্রি-মোহনী থেকে আঁকাবাঁকা হয়ে মদন উপজেলার ধনু নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে।
মগড়া নদীর গড় দৈর্ঘ্য ১১২ কি.মি. বা ৭০ মাইল এবং গড় প্রশস্থতা ৭৭ মিটার। কিন্তু মগড়া নদী এখন আর আগের মতো নেই। নদীর দুই পাড়ে নির্মিত হচ্ছে স্থাপনা। নদীর বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ভরাট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ নদীতে এক সময় লঞ্চ, স্টিমার, বড় বড় পাল তোলা নৌকা, ট্রলার চলাচল করত। নদীটি ছিল খরস্রোতা।
কিন্তু বর্তমানে মগড়ার দুই পাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা, নদীটির উৎপত্তিস্থল ত্রি-মোহনীতে নদী মুখটি বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইস গেট স্থাপন করেছে এবং এলজিইডি পূর্বধলা-নেত্রকোনা সড়ক স্থাপন করেছে। ফলে মগড়ার পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
মগড়া নদী রক্ষায় নেত্রকোনায় বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন করেছে। বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মাক্তারপাড়া, পুরাতন হাসপাতালের সামনে, থানার মোড়, আনন্দ বাজার মোড়, চন্দ্রনাথ স্কুলের সামনেসহ বিভিন্ন স্থানে কম উচ্চতাসম্পন্ন কিছু ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। ফলে নদীপথে নৌ- চলাচল বন্ধ রয়েছে। মগড়া এখন মরা নদীতে রূপান্তর হয়েছে।
নেত্রকোনা পৌর শহরের প্রায় ৫ কি.মি. এলাকাজুড়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে আঁকাবাঁকা হয়ে নদীটি প্রবাহিত হওয়ায় আর.ও.আর, সি.এস অনুযায়ী নদীর অনেক স্থান দখল হয়ে গেছে। এতে করে নদীটির পৌর এলাকায় প্রশস্ততা কমে গেছে। পৌর এলাকায় জমির দাম বেশি হওয়ায় নদীতে দখলদারিত্ব বেড়েছে।
নেত্রকোনা পৌর এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশনে ব্যবহৃত বেশিরভাগ ড্রেনের ময়লাযুক্ত পানি, মগড়া নদীতে গিয়ে পড়ছে। এতে করে নদীটির পানি দূষিত হচ্ছে। নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নদীর দেশীয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। নদীটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন নদীটি পুনঃখনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করা।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক মুহা. নাজমুল কবীর সরকার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২০ অর্থবছরে নদী প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সম্মিলিতভাবে নেত্রকোনা পৌর এলাকায় ৩১৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ২৮৩টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদও করে। তন্মধ্যে ২৩টি স্থাপনা উচ্চ আদালতের মামলাজনিত কারণে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। নদীর তীরবর্তী উচ্ছেদকৃত জায়গাও ফের দখল হয়ে গেছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, মগড়া নদী সংস্কারে আমরা কাজ করছি। পৌর মেয়রকে পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেন অব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
নেত্রকোনা পৌর সভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান বলেন, মগড়া নদীর নাব্য আগের থেকে অনেক কমে গেছে। নদীর তীর দখলমুক্ত ও পরিকল্পিত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও ড্রেন নির্মাণ কাজ প্রক্রিয়াধীন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য