-->
শিরোনাম

প্রভাবশালীদের দখলে অস্তিত্ব সংকটে খোয়াই নদী

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রভাবশালীদের দখলে অস্তিত্ব সংকটে খোয়াই নদী
হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরীবাজার এলাকায় খোয়াই নদীর পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দোকানপাট

হবিগঞ্জ শহরের পূর্বপ্রান্ত দিয়ে বহমান ১৬৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে খোয়াই নদী। যেটি ভারতের ত্রিপুরা থেকে খোয়াই এলাকার ভেতর দিয়ে জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বাল্লা সীমান্ত দিয়ে উত্তর-পশ্চিম মুখে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে। এ নদীপাড়ের প্রায় অনেকাংশ প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। নদীর পাড়ের অংশ দখল করে অবৈধভাবে কেউ কেউ বালুর ডিপো করে রাখছেন। কেউ কেউ পাড়ের নিচ থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। ইচ্ছা মতো কেউ কেউ চাষাবাদও করছেন। ফলে নদীভাঙনের আশঙ্কা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

 

এদিকে হবিগঞ্জ জেলা শহরের অদূরে বয়ে যাওয়া খোয়াই নদীর পাড় অনেকেই রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে দখল করে রেখেছেন। বাড়তি টাকা ইনকামের জন্য ওই প্রভাবশালী মহলটি বিভিন্ন ধরনের ৩ শতাধিক স্থাপনা নির্মাণ করেছেন ও এগুলো ভাড়া দিয়েছেন। বিভিন্ন রকমের এ দোকানপাট থেকে নিয়মিত বর্জ্য নদীর পানিতে ফেলা হচ্ছে, ফেলা হচ্ছে বাসাবাড়ির ময়লা। এতে দূষিত হচ্ছে নদী।

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, খোয়াই নদীর চৌধুরীবাজার থেকে শহরের দক্ষিণের শেষ অংশ পর্যন্ত নদীর দুই পাশে অবৈধভাবে ৩ শতাধিক দোকানপাঠ, বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অবৈধ দখলকারীরা সরাসরি এগুলো ব্যবহার করছেন না। তবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় মাসিক ভাড়া দিয়ে সুবিধা ভোগ করে আসছেন তারা।

 

সচেতন মহল ও স্থানীয়রা নদীর অস্তিত্বসংকটের জন্য দায়ী করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। কর্তৃপক্ষের কিংকর্তব্যবিমূঢ়তার কারণে নতুন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। তবে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের মতো শিগগিরই অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হবে।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই সুযোগ নিচ্ছে প্রভাবশালী মহলটি। কয়েক বছর আগে খোয়াই নদীর মাছুলিয়া থেকে কামড়াপুর অংশ পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড ও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। সে সময় উচ্ছেদ করা হয়েছিল কয়েক শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু অভিযানের পরপরই সঠিক ভালো ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আবার সেই পুরনো স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনাগুলো।

 

জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা সমীরণ চক্রবর্তী জানান, নদীর পাড় ঘেঁষে মাটি কেটে বিক্রি করার ফলে নদীভাঙনের তীব্র শঙ্কা বিরাজ করছে। একই সঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া বাঁধও এর কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। নয়তো খোয়াই নদী তার নিজস্বতা হারাবে। অনেকেই নদীর জায়গায় চায়ের স্টল, ভাতের হোটেল, ওয়ার্কশপ, স্টেশনারিসহ নানা ধরনের দোকানপাট গড়ে তুলেছেন। এসব অবৈধ স্থাপনার জন্য শহরের নবীগঞ্জ রোড ও হবিগঞ্জ বানিয়াচং রোডে সবসময় যানজট লেগে থাকে। নদীর অস্তিত্ব বাঁচাতে এগুলো উচ্ছেদ করাই হবে সময়োচিত উদ্যোগ।

 

জানতে চাইলে হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, নদীর জায়গায় নির্মিত অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের ব্যাপারে আমরা চিন্তা করছি। এরই অংশ হিসেবে খোয়াই নদীর চৌধুরীবাজার এলাকায় ১৪০টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রেরণ করাও হয়েছে।

 

তিনি বলেন, তালিকা অনুযায়ী অবৈধ স্থাপনাগুলো শিগগির উচ্ছেদ করা হবে। এগুলো উচ্ছেদের পর পরবর্তীতে আবার তালিকা তৈরি করা হবে। অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এড়াতে উচ্ছেদ করা জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version