-->

তাঁতশিল্পে আবারো ধস, বিপাকে অর্ধলক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
তাঁতশিল্পে আবারো ধস, বিপাকে অর্ধলক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে তাঁতবস্ত্রের কাজে ব্যস্ত শ্রমিক

দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় রং, সুতা, কেমিক্যালসহ তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁতশিল্পে আবারো ধস নেমেছে। কমে গেছে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটের পাইকারি বাজারে তাঁতবস্ত্রের বেচা-বিক্রি। ফলে তাঁতিরা পুঁজি সংকটে পড়ায় উপজেলায় শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ তাঁত বন্ধের পথে। এতে বিপাকে পড়েছেন অর্ধলক্ষাধিক তাঁত শ্রমিক।

 

স্থানীয় তাঁত শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, বাজার মন্দা রোধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও তাঁত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার সরকারি ব্যবস্থা না থাকায় তাঁত শ্রমিকেরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফলে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে প্রায়। তাঁতিরা জানান, শাহজাদপুরসহ বেলকুচি, চৌহালী, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ সদর, বেড়া, সাঁথিয়া ও পাবনা সদর উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাঁতবস্ত্রের বাজার পড়ে যাওয়ায় চরম অর্থনৈতিক মন্দাভাব চলছে এসব উপজেলায়।

 

অন্যদিকে, শাহজাদপুর ও টাঙ্গাইল অঞ্চলে কাপড়ের হাট থেকেই শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু এলাকায় তাঁতের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও থ্রি-পিস রপ্তানি হয়ে থাকে। সে রপ্তানিও কমে অর্ধেকে নেমে যাওয়ায় তাঁত ব্যবসায় চরম ধস নেমেছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র তাঁত মালিক তাঁত ব্যবসায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে তাঁত শ্রমিকেরা ন্যায্য মঞ্জুরি না পেয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন।

 

শাহজাদপুর তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আল-মাহমুদ বলেন, রং, সুতা, কেমিক্যালের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৃষ্টি-বন্যাসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় বৃদ্ধি, ন্যায্য মঞ্জুরিপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত, ঋণের কিস্তির ঘানি টানাসহ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত শাহজাদপুর উপজেলার তাঁত শ্রমিকেরা। থ্রি-পিসের বহুল ব্যবহারের কারণে তাঁতের শাড়ির ব্যবহার বহুলাংশে কমে গেছে।

 

ইতোমধ্যেই পুঁজি সংকটে শাহজাদপুরের প্রায় ৬০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়া লাখো শ্রমিক বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করেছেন। আর প্রায় ৭০ হাজার শ্রমিক যারা তাঁতের কাজ করেছেন, তাদের গড় আয় ৩০০-৪০০ টাকা হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন। উদ্ভত পরিস্থিতি নিরসনে তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

অন্যদিকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড টেক্সটাইলস মিলস অ্যান্ড পাওয়ারলুম ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও সাবেক পরিচালক হায়দার আলী বলেন, রং, সুতা কেমিক্যালের মূল্য বৃদ্ধিতে ও পুঁজি সংকটে পড়ে শাহজাদপুরের লক্ষাধিক তাঁতের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বর্তমানে কিছু তাঁতবস্ত্র বিক্রি হলেও তা পরিমাণে কম হওয়ায় তাঁতিরা মহাবিপাকে পড়েছেন।

 

যারা ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন, তারা সেই ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version