সিরাজগঞ্জ জেলায় ভাসমান ভিক্ষুকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভূমিহীন, দারিদ্র্য,কাজের অভাব ও ছেলেমেয়েদের অবহেলার কারণে প্রতিদিনই আশপাশের জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শহরে এসে ভিক্ষার জন্য ভিড় করছে এসব ভাসমান ভিক্ষুকরা। ভিক্ষুকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়লেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলার কোর্ট ভবন, এসএস রোড, মুজিব সড়ক, বাজার স্টেশন, বড়পুলসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ভিক্ষুকরা দলবেঁধে ভিক্ষা নিতে বিভিন্ন দোকানে দোকানে ঘোরাঘুরি করছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় অর্ধশত ভিক্ষুককে বিভিন্ন অজুহাতে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলছে নিজে অসুস্থ, আবার কেউ বলছে ঘরে অসুস্থ স্বামী রয়েছে, কেউবা বলছে স্বামী মারা গেছে, সন্তানরা দেখাশোনা করে না। কেউ কেউ আবার বলছে সন্তানরা যে টাকা আয় করে তা দিয়ে তাদের চলে না।
সদর উপজেলার খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের সরিষাখোলা গ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জ শহরে ভিক্ষা করতে আসা দুলাল হোসেন বলেন, আগে রিকশা চালাতাম। সড়ক দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যাওয়ার পর অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউই সাহায্য দেয় নাই। তাই উপায় না পেয়ে এখন ভিক্ষা করছি।
কাজীপুর উপজেলার একডালা গ্রাম থেকে শহরে ভিক্ষা করতে আসা বৃদ্ধা মর্জিনা খাতুন বলেন, অনেক আগেই স্বামী মারা গেছে। জমি-জমা, বাড়ি-ঘর কিছুই নেই। মাসে ৫০০ টাকা বয়স্ক ভাতা পেলেও তা দিয়ে চলে না। তাই ভিক্ষা করে কোনো রকমে দিন পার করছি।
রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা থেকে আসা রজব আলী বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা পা ভেঙে গেছে। কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। দুুই ছেলে থাকলেও আমাকে দেখাশোনা করে না। তাই পেটের দায়ে ভিক্ষা করে বেড়াই। প্রথমে আমি ভিক্ষা করতে গিয়ে অপমানিত বোধ করতাম, কিন্তু এখন আর মনে হয় না।
শহরের এস এস রোড এলাকার দুই পাশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বলেন, শহরের দোকানগুলোতে প্রতিদিনই অনেক ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। ভিক্ষুকদের অধিকাংশই নারী। দোকান খোলার পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিক্ষুকেরা দলবেঁধে দোকানে দোকানে ভিড় করে।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় সরকারি জরিপকৃত প্রায় ৪ হাজারের উপরে ভিক্ষুক রয়েছে। এ পর্যন্ত আমাাদের দপ্তর থেকে ২১৩ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের করেছি।
আরো ভিক্ষুককে যাতে সহযোগিতা দেয়া যায় এ জন্য আমরা কাজ করছি। প্রয়োজনে আবারো ভিক্ষুকদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য