বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে আমূল বদলে গেছে চট্টগ্রামের সাগরপাড়। বৃত্তাকারে তৈরি হওয়া আউটার রিং রোড সাগরতীরে তৈরি করেছে নান্দনিক আবহ। এক পাশে সমুদ্রসৈকত, আরেক পাশে টানেল লাগোয়া এ দুটি স্থাপনা দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি করেছে সাগরতীরে। বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে ৩ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)।
টানেলের মুখে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বহদ্দারহাট-পতেঙ্গা সড়ক মিলিত হয়ে এখন জংশন তৈরি হয়েছে। এই জংশন আবার বিস্তৃত হবে চট্টগ্রামের মিরসরাই পর্যন্ত। সেখানে কর্মযজ্ঞ চলছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের। পাঁচ শতাধিক কারখানা হবে এই শিল্পনগরে। এসব কারখানার পণ্য টানেল হয়ে যাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামে। যেতে পারবে মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরেও। ২৮ অক্টোবর টানেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বাড়ুয়া বলেন, মাস্টারপ্লেনে অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল এই রিং রোড। নগরের যানজট নিরসনে ভ‚মিকা রাখার পাশাপাশি এটি টানেলের গাড়ির চাপ সামলাতেও ভালো ভূমিকা রাখবে। সাগরের তীর ঘেঁষে এই সড়ক নির্মিত হওয়ায় অন্যরকম এক সৌন্দর্যও অবলোকন করতে পারছেন গাড়ির যাত্রীরা। তবে এই সড়কের পূর্ণাঙ্গ সুফল পেতে হলে অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে। চলছে আরও কর্মযজ্ঞ টানেলের জংশনে ওয়ানওয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নির্মাণ করা হবে দুটি ফ্লাইওভার ও দুটি আন্ডারপাস (মাটির নিচ দিয়ে চলাচলের পথ)। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম ইপিজেডকে আউটার রিং রোডের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। ইপিজেডের পণ্য ও কাঁচামালবাহী গাড়ি শহরে প্রবেশ না করে রিং রোড হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আসা-যাওয়া করবে। এ জন্য দুই লেনের দুটি সেতু (ভায়াডাক্ট) নির্মাণ করা হবে। এগুলো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২১ কোটি টাকা। চিটাগং সিটি আউটার রিং রোড (দ্বিতীয় পর্যায়) নামে আরেকটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ফিডার রোড-২, আউটার রিং রোড ফৌজদারহাট পর্যন্ত সম্প্রসারণ এবং সার্ভিস সড়ক নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
নগরের লালখানবাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণও শেষ পর্যায়ে। এটি ব্যবহার করে বিমানবন্দরে যাওয়ার পাশাপাশি টানেল ব্যবহার করে দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। প্রায় ৪ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। এটির একটি অংশ যুক্ত হয়েছে টানেল-সংলগ্ন রিং রোডে। বাঁকে বাঁকে বাধা সরেজমিন দেখা গেছে, আউটার রিং রোডের এক লেনজুড়ে সারি সারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি পার্ক করে রাখা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে গাড়িগুলো এখানে পার্ক করে রাখা হয়। সড়কটির হালিশহর ফুল চৌধুরীপাড়া এলাকায় অন্তত অর্ধশতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি পার্ক করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সড়কটির চৌচালা, খেজুরতলা, আনন্দবাজার ঘাট, পতেঙ্গা হাউজিং কলোনি রোডের মাথা, আকমল আলী রোডের মাথা ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় শত শত কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও দূরপাল্লার বাস পার্ক করে রাখা হয়েছে।
কেউ পার্কিংয়ের প্রয়োজনে, আবার কেউ সাগরপাড়ের সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে রাখছেন গাড়ি। টানেল চালু হলে এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী নেতারা। চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ওমর হাজ্জাজ বলেন, ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কটি চট্টগ্রামের সৌন্দর্য বহু গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটির কাজ শেষ করতে পোহাতে হয়েছে অনেক কাঠখড়। এই সড়কের সুফল পেতে হলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। কেউ যাতে অবৈধভাবে গাড়ি পার্ক করতে না পারে, সে জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে ট্রাফিক পুলিশকে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো ট্রাক টার্মিনাল নেই। বন্দরে প্রবেশের জন্য অপেক্ষমাণ পণ্যবাহী গাড়ি সড়কে পার্ক করে রাখে। তাদের এক সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে অন্য সড়কে গিয়ে পার্ক করে। এর স্থায়ী সমাধানে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ খুবই জরুরি। বিষয়টি নিয়ে সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও বন্দরকে ভাবতে হবে। টানেলের গতি যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য