অনেকটাই জোড়াতালি দিয়ে চলছে মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কার্যক্রম। যুগের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দাবি রাখলেও পাঠদানের ভবনগুলো পুরোনো ও জরাজীর্ণ। তবে কলেজটির উন্নয়নে সম্প্রতি একনেকে পাস হওয়া একটি প্রকল্প শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আশার আলো দেখাচ্ছে। কলেজে এডিবির অর্থায়নে একটি স্মার্ট টেক্সটাইল টেস্টিং লিভিং ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৭২ কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ল্যাবের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের আধুনিক ভবন নেই। ছাত্রী ও ছাত্রদের হোস্টেলের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। লাইব্রেরিতে নেই গবেষণার জন্য বিদেশি জার্নাল। প্রশাসনিক ভবন ও ল্যাবগুলোর দেয়ালে জন্মেছে শেওলা। খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। চাহিদার তুলনায় প্রজেক্টর কম। ক্লাসরুমে ফ্যান আছে, তো সুইচ নেই। আবার কোনো কক্ষে সুইচ থাকলেও লাইট-ফ্যান নষ্ট। শিক্ষক সংকট তো আছেই। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি প্রথমে ১৯১১ সালে পেরি প্যাটেটিক বুনন স্কুল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর ১৯৬০ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৮০ সালে পেরি প্যাটেটিক বুনন স্কুলে টেক্সটাইল প্রযুক্তিতে ২ বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স চালু করা হয়। তখন একে বিভাগীয় টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট বলা হতো। সময়ের চাহিদার তাগিদে ১৯৯৩ সালে এই ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়।
২০০১ সাল থেকে একে ৪ বছর মেয়াদি করা হয়। টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের উচ্চ চাহিদার কথা বিবেচনা করে ২০০৬-০৭ সেশনে টেক্সটাইল ডিপ্লোমা কোর্স বাতিল করে সরকার একে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নিয়ে টেক্সটাইল প্রকৌশলে ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করে।
দেশের ৮টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে পড়াশোনায় এই প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই সেরা। ১৫ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত কলেজটিকে যুগের চাহিদা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিও দীর্ঘদিনের।
কলেজের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুর দিকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর একটি ডিপার্টমেন্ট ছিল। বর্তমানে ৪টি বিভাগে প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। বিভাগগুলো হচ্ছে ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং, ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং। বিভাগগুলোতে জনবলের তুলনায় কাজের চাপ প্রায় ৮ গুণ। শিক্ষক ঘাটতির কারণে অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান চলছে।
শাকিল, জুবায়েরসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহর থেকে দূরে হওয়ায় অতিথি শিক্ষকরা ক্লাসের সময়সূচি নির্ধারণ করে থাকেন তাদের সুবিধামতো। এতে ক্লাসের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। কলেজে গ্যাস সংযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন সময়োপযোগী পাঠ থেকে। খেলার মাঠ সারাবছরই পানিতে নিমজ্জিত থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ পান না। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য নেই কোনো যানবাহন।
কয়েকজন শিক্ষক জানান, এই কলেজে শিক্ষক এবং স্টাফ কোয়ার্টার সংকট রয়েছে। নিয়োগবিধির জটিলতার কারণে সময়মতো পদোন্নতি না হওয়ায় শূন্য পদগুলো পূরণ করা হচ্ছে না। প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবন সংকট রয়েছে। চারপাশে বাউন্ডারি ওয়ালগুলোর নাজুক অবস্থা। কলেজের নিজস্ব যানবাহন না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় প্রশাসনিক কাজে।
চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী আজম রোকন বলেন, কারিগরি সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টগুলোতে ৭০ শতাংশ শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। বলা যেতে পারে সৃষ্ট পদের ৫০ শতাংশ শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। তবে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখভাল করে। এডিবির অর্থায়নে প্রায় ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি স্মার্ট টেক্সটাইল টেস্টিং লিভিং ল্যাব হতে যাচ্ছে এ কলেজে। এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম। শিগগিরই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তখন সব সমস্যা কেটে যাবে।
প্রায় ১৫ একরের সুবিশাল এই ক্যাম্পাসটি অদূর ভবিষ্যতে ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দাবি রাখে বলেও জানান তিনি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য