প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে চাল, ডাল, ডিম ও মুদ্রা। সেন্টমার্টিনের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের আবর্জনা জমা দিয়ে দ্বীপের বাসিন্দারা পাচ্ছেন প্রয়োজনীয়সামগ্রী। সেন্টমার্টিনের স্থানীয়রা বলছেন, প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারের পাশাপাশি উপকৃত হচ্ছেন তারা। আর প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কারের মাধ্যমে দ্বীপকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
চারদিকে নীল আর নীল, স্বচ্ছ নীল জলরাশিতে খেলা করছে ডিঙি নৌকা। সাগরে নেই ঢেউয়ের গর্জন আর ঢেউয়ের মাঝে উঁকি দিচ্ছে প্রবাল পাথর। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের একমাত্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। নারিকেল জিঞ্জিরা মানে অবকাশযাপনের অন্যতম স্থান, যা উপভোগে পর্যটকরা ছুটে যায় নীল জলরাশির এই দ্বীপে। কিন্তু পর্যটক ও স্থানীয়রা যত্রতত্র ব্যবহারের পর ফেলে দেয় প্লাস্টিক বর্জ্য। যার কারণে দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের প্রাণ ও জীববৈচিত্র্য।
কিন্তু সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে চালু হয়েছে প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর। যেখানে দ্বীপের বাসিন্দারা প্লাস্টিক পণ্যের খালিপাত্র বা বোতল জমা দিয়ে নিচ্ছেন চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। ফলে উপকৃত হচ্ছে দ্বীপের বাসিন্দারা। এতে স্থানীয়দের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে, ঠিক তেমনই কমবে পরিবেশ দূষণ। এই ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ প্রতি মাসে দুইবার করে চালু থাকছে। এর ফলে মানুষ তাদের জমানো প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ করে প্রয়োজন অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিতে পারবেন নিয়মিত।
সোমবার দুপুরে বেলুন উড়িয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন। এসময় তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক প্ল্যানেট ও মানবদেহের জন্য কী পরিমাণ ভয়াবহ তা যদি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হই, তাহলেই এ আয়োজনের সার্থকতা। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন গত বছর এই আয়োজনের মাধ্যমে ২৩ ম্যাট্রিক টন প্লাস্টিক সেন্টমার্টিন থেকে মূল ভূখন্ডে স্থানান্তর করেছিল। এ বছর আশা করছি এর চেয়েও বেশি পরিমাণ প্লাস্টিক এখান থেকে সরানো যাবে। এ কার্যক্রমে জেলা প্রশাসন একাত্মতা ঘোষণা করছে।
সেন্টমার্টিনের সামুদ্রিক শৈবাল ও রঙিন প্রবাল সমৃদ্ধ বিশাল সমুদ্রের মনোরম দৃশ্য সবার নজর কাড়লেও প্রতিনিয়ত সমুদ্র ও দ্বীপের পরিবেশের অবনতি ঘটছে। যেখানে সেখানে এমনকি সমুদ্রের পানিতে প্লাস্টিক ফেলার কারণে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ, হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন।
স্থানীয়দের ধারণা, পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব কেবলমাত্র সরকারের। কিন্তু আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও সরকারের একার পক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা। এছাড়াও পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের মূল্য দেয়া বা রিসাইকেল করার মতো কোনো ব্যবস্থা সেন্টমার্টিনে না থাকায় সেখানকার মানুষ প্লাস্টিককে অপ্রয়োজনীয় মনে করে ফেলে দেন।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, সংগৃহীত প্লাস্টিক দ্বীপ থেকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে রিসাইকেল করা হয়। সংগৃহীত প্লাস্টিকের একটি অংশ দিয়ে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবীরা কক্সবাজারে তৈরি করা হবে সচেতনতামূলক প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন জনসাধারণের কাছে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য