-->

নার্সারিগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে তালের চারা উৎপাদন

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
নার্সারিগুলোতে বৃদ্ধি পাচ্ছে তালের চারা উৎপাদন
মায়ের দোয়া নার্সারিতে তালের চারা রোপণ করা হচ্ছে

খুলনার পাইকগাছায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নার্সারিতে তালের চারা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তালের চারার চাহিদা বাড়ায় নার্সারিগুলোতে প্রচুর পরিমাণ চারা তৈরি করা হচ্ছে। পাইকগাছার সততা নার্সারিতে গত মৌসুমে প্রায় ৮০ হাজার তালের চারা তৈরির পরিচর্যা চলছে। চলতি মৌসুমে মায়ের দোয়া নার্সারিতে প্রায় ৩২ হাজার চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে। তালগাছ প্রকৃতির বন্ধু ও প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষাকারী বৃক্ষ। তালগাছ পরিবেশবান্ধব ও বজ্রপাত থেকে রক্ষাকারী গাছ। তালগাছ ভূমির ক্ষয়রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই তালের চারা রোপণ করা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে।

 

তাল একটি অতি প্রাচীন ফল। একক কান্ড বিশিষ্ট এ দেশে অতি পরিচিত একটি বৃক্ষ। এর কান্ড সোজা এবং পাতাগুলো পাখার মতো গোলাকার। তালের জন্মস্থান মধ্য আফ্রিকা বলে ধারণা হলেও অনেকে বলেন এটি আমাদের উপমহাদেশীয় বৃক্ষ। তালের পত্রে অনেক উঁচু শিরা আছে। শিরাগুলো পত্রদন্ডের গোড়া থেকে অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। পত্রের কিনারা কাঁটার মতো।

 

পত্রদন্ডের উভয় কিনারায় করাতের মতো কালোবর্ণের দাঁত আছে। পুরুষ ও স্ত্রী আলাদা গাছ উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের সব এলাকায় কমবেশি তাল উৎপাদন হলেও ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়। তালের কোনো অনুমোদিত জাত নেই। তবে এ দেশে বিভিন্ন আকার ও রঙের তাল দেখা যায়। আবার কোনো কোনো তালগাছের বারমাসই কমবেশি তাল ধরে থাকে।

 

প্রায় সব ধরনের মাটিতেই তাল ফসলের আবাদ করা যায়। তবে উঁচু জমিতে এবং ভারী মাটি এটি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এ দেশে বাগান আকারে কোনো তাল ফসলের আবাদ নেই। আগস্ট মাস থেকে তাল পাকতে শুরু করে এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত পাকা তাল পাওয়া যায়। ভালো তাল বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্বাচিত মাতৃবৃক্ষ থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করা উচিত।

 

দুইভাবে তালগাছ লাগানো যায়। একটি পদ্ধতি হলো সরাসরি বীজ বপন করে। অন্যটি বীজতলায় চারা উৎপাদন করে এর আবাদ করা যায়। ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। সারি থেকে সারি ৭ মিটার এবং চারা থেকে চারা ৭ মিটার বীজের মাধ্যমে তালের বংশবিস্তার হয়ে থাকে। পাইকগাছার গদাইপুরে সততা নার্সারিতে তালের চারা তৈরির জন্য গত বছর দেড় লাখ তাল বীজ বপন করা হয়। মাটির ২ ফুট উঁচু বেড তৈরি করে তালের বীজ বপন করা হয়। অংকুরিত বীজ মাটির নিচের দিকে বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে মাটি খুড়ে বীজপত্র তুলে চটের তৈরি পলিব্যাগে রোপণ করে চারা তৈরির পরিচর্যা করা হচ্ছে।

 

সততা নার্সারির মালিক অশোক কুমার পাল জানান, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তালের চারা উৎপাদন করছে। গত বছর দেড় লাখ তালবীজ থেকে ৮০ হাজার তালের অংকুরিত বীজ রোপণসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা। এখনো চারা তৈরির পরিচর্যার কাজ চলছে।

 

মায়ের দোয়া নার্সারির মালিক মো. ইউছুপ গাজী জানান, প্রায় ৩২ হাজার চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে। ২৫ হাজার চারা টিকতে পারে, সব আঁটি থেকে চারা বের হয় না। চারা তৈরি করতে তার প্রায় ৬ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। উৎপাদিত তালের চারার প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নার্সারি, এনজিও ও সরকারিভাবে তালের চারা ক্রয়ের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তা ছাড়া উৎপাদিত তালের চারা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

তার নার্সারিতে তাল বীজতলা তৈরির পর সবসময় ভিজিয়ে রাখা হচ্ছে। ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই বীজ অংকুরিত হতে শুরু করবে। বীজ অংকুরোদগমের সময় বীজপত্রের যে আবরণী বের হয়ে আসে তা দেখতে শিকড়ের মতো কিন্তু আসলে তা শিকড় নয়। এই বীজপত্রের আবরণীর মাঝে ফাঁপা থাকে, অগ্রভাগে ভ্রূণ অবস্থান করে এবং টিউবের আকৃতিতে বৃদ্ধি পায়। হলদে রঙের জার্মটিউবের অগ্রভাগে ভ্রূণ আবৃত থাকে এবং তা সাধারণত মাটির নিচের দিকে বৃদ্ধি পায়।

 

জার্মটিউব লম্বা হবার পরেই ভ্রূণের কান্ডের আবরণী এবং ভ্রূণ মূলের আবরণী এর বৃদ্ধি শুরু হয়। জার্মটিউবের মতো ১৫-৪০ সে. মি. লম্বা হয়ে থাকে। জার্মটিউব লম্বা হবার ১০-১৫ সপ্তাহের মধ্যে একটি পাতলা আবরণীতে পরিণত হয়। এ অবস্থায় চারায় কেবল ১টি শিকড় থাকে। চারার গোড়া ও শিকড়ের গা থেকে ছোট ছোট অনু শিকড়ও গজাতে শুরু করে। মৌসুমী বৃষ্টিপাত আরম্ভ হওয়ার পরপরই পলিব্যাগে উত্তোলিত ৩০-৩৫ সে. মি. লম্বা পাতা বিশিষ্ট চারা মাঠে রোপণ করা হবে।

 

তবে মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা থাকলে অথবা পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে চারা এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত লাগানো যেতে পারে। চারা রোপণের পর অন্তত প্রথম ৩ বছর রোগ-বালাই ও কীটপতঙ্গের আক্রমণের হাত হতে চারা রক্ষা করা আবশ্যক।

 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ বলেন, তালের চারা তৈরি করে নার্সারি মালিকরা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি তালের চারার গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ জানতে পারছে। তালগাছ বজ্রপাতরোধক বৃক্ষ। কৃষকরা বজ্রপাতে বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের খোলা মাঠে কাজ করতে হয়। তাই বজ্রপাতে কৃষক বেশি মারা যায়। রাস্তার পাশে ও খোলা মাঠের উঁচু স্থানে সরকারিভাবে ও কৃষি অফিস থেকে তাল বীজ ও চারা রোপণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের তালের চারা রোপণ করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version