-->

বগুড়ায় সবজি বাজারে ধস, দুশ্চিন্তায় কৃষক

বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ায় সবজি বাজারে ধস, দুশ্চিন্তায় কৃষক
বগুড়ার মহাস্থান হাট। ছবিটি সোমবার তোলা

লাগাতার অবরোধের কারণে বগুড়ায় সবজির বাজারে ধস নেমেছে। উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সবজির বাজার খ্যাত মহাস্থান হাটে কৃষিপণ্যের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা ও পরিবহন সংকটে সবজির দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এতে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

 

কৃষকরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে তারা নতুন করে সবজির আবাদ করতে পারবেন না।

 

সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, শীতকালীন আগাম জাতের বিভিন্ন ধরনের সবজি বিক্রির জন্য হাটে এনে অপেক্ষা করছেন কৃষকরা। হাটজুড়ে সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা একেবারেই হাতে গোনা।

 

বিক্রেতারা জানান, গত সপ্তাহেও এই হাটে প্রতিমণ ফুলকপি ২ হাজার, মূলা ১ হাজার ৬০০, বেগুন ১ হাজার ৬০০, শসা ১ হাজার ৬০০, ঝিঙে ১ হাজার ৮০০, বরবটি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০, পেঁপে ৮০০, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১৫০, বাঁধাকপি প্রতিটি ৩২ থেকে ৩৫ এবং লাউ প্রতিটি ৩৫ টাকা দরে বেঁচাকেনা হয়েছে। তবে লাগাতার অবরোধের কারণে একই হাটে দাম কমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। প্রতি মণ ফুলকপি ১ হাজার ২০০, মূলা ৪০০ থেকে ৬০০, বেগুন ১ হাজার ২০০, শসা ৬০০, ঝিঙে ১ হাজার ২০০, বরবটি ৬০০ থেকে ৭০০, পেঁপে ৪০০, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০, বাঁধাকপি প্রতিটি ২২ থেকে ২৫ এবং লাউ প্রতিটি ২০ থেকে ২২ টাকা দরে বেঁচাকেনা হয়।

 

হাটে ফুলকপি বিক্রি করতে আসা শিবগঞ্জ উপজেলার ধাওয়াগীর গ্রামের মাহবুবুর রহমান বলেন, কয়েক দিন আগেও ফুলকপি বিক্রি করেছি ২ হাজার ২০০ টাকা মণ। আর এখন এর দাম ১২শ টাকা।

 

লাউ বিক্রি করতে আসা সদর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আব্দুল হামিদ বলেন, একেকটা লাউ বিক্রি করে ক্ষতি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা। জমিতে পোক্ত লাউ রাখা যায় না। বাধ্য হয়েই তাই হাটে আনা লাগে।জানতে চাইলে সবজির পাইকারি ক্রেতা আবুল কালাম বলেন, সবজি কিনে যদি রাজধানী বা অন্য বাজারে না পাঠানো যায় তাহলে কিনে তো লাভ নেই। অবরোধের কারণে ট্রাক বের হতে চাচ্ছে না। যে দু-একজন ট্রাক নিয়ে যেতে চায় তারাও দাম হাঁকছে দ্বিগুণ। ফলে ক্রেতারা সবজি কেনার সাহস পাচ্ছেন না।

 

সবজির পাইকার নাজমুল হক বলেন, ‘মহাস্থান হাট থেকে কেনা সবজি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের মোকামে পাঠানো হয়। এসব মোকামে সবজি পাঠাতে ট্রাকভাড়া গড়ে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। অবরোধের আগে ঢাকার ট্রাকভাড়া ছিল ১২ হাজার টাকা। এখন তা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। তা-ও চালকরা অবরোধের সময় ট্রাক নিয়ে যেতে তেমন সম্মত হচ্ছেন না।’

 

মহাস্থান হাট থেকে সবজি নিয়ে ঢাকায় আসা ট্রাকচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘পথে পথে ব্যারিকেড। ঢিল ও ককটেল ছোড়া হচ্ছে। এর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যেমন চালক-হেলপার যেতে আগ্রহী না, তেমনি গাড়ির মালিকরাও রাস্তায় গাড়ি নামাতে চাচ্ছেন না। এ কারণে যে দু-একজন গাড়ি বের করছেন তারা বেশি টাকা নিচ্ছেন।’

 

মহাস্থান বাজারের ইজারাদার মনিরুজ্জামান বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে হাট-বাজারে প্রভাব পড়েই। সেটা এখানেও পড়েছে। আগে যেখানে দেড় থেকে ২০০ গাড়ি মালামাল যেত। এখন সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ গাড়ি পুলিশি নিরাপত্তায় মাল পাঠানো হচ্ছে। জেলার বাইরের বাজারে মালামাল না গেলেও আশপাশের বাজারে ছোট ছোট পরিবহনে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, সবজি, চালসহ জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় এজন্য সমন্বিতভাবে কাজ করা হচ্ছে। পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে তৎপর আছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version