-->
টাঙ্গাইল পৌরসভা

দখলের পথে ২২ খাল, অস্তিত্ব নেই ৫টির

আ. রশিদ তালুকদার, টাঙ্গাইল
দখলের পথে ২২ খাল, অস্তিত্ব নেই ৫টির
টাঙ্গাইলে কোদালিয়া খাল অবৈধভাবে দখল ও ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে

‘নদী-চর, খাল, বিল, গজারির বন, টাঙ্গাইল শাড়ি তার গরবের ধন’ এ বচনটি টাঙ্গাইলবাসীর কাছে অনেকটা ফিঁকে হয়ে আসছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যে গৌরবদ্বীপ্ত টাঙ্গাইল শহরের ২৭টি খালের মধ্যে ৫টি দখলদারদের দৌরাত্ম্যে ইতোমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে। প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা ২২টি খাল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

 

টাঙ্গাইল এক সময় নদীপথে বাণিজ্যনির্ভর শহর ছিল। ছোট-বড় জাহাজ, মালামাল পরিবহনের জন্য বড় বড় নৌকা ও মানুষের ব্যবহারের জন্য মিঠা পানির সংরক্ষণে টাঙ্গাইলের খালগুলো খনন করা হয়।

 

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড শহরে কিছু খাল রয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি। তবে কাগজ-কলমে খালের দাগ-খতিয়ান নম্বর, এসএ, সিএস, আরওআর ও বিএস নম্বর পাওয়া গেলেও বাস্তবে খালগুলোর অস্তিত্ব ক্ষীণ। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কাগজপত্র ঘেটে টাঙ্গাইল শহরের আওতায় ২৭টি খালের সন্ধান পাওয়া যায়।

 

এর মধ্যে ৫টি খাল প্রভাবশালী লুটেরাদের দৌরাত্ম্যে ইতোমধ্যে অস্তিত্ব হারিয়েছে। বাকি ২২টি খাল প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা নানা কৌশলে ক্রমান্বয়ে দখল করছে। খাল দখল করে নির্মাণ করছে বড় বড় মার্কেট ও বাসাবাড়ি। মার্কেট ও বাসাবাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের পাইপের সংযোগ এসব খালের মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায় খাল থেকে পচা দুর্গন্ধ ছড়ায়। এসব খাল উদ্ধার করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার দাবি শহরবাসীর।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) টাঙ্গাইলের জরিপ থেকে জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১০, ১২, ১৩ ও ১৬নং ওয়ার্ডে কোনো খাল নেই। বাকি ১৪টি ওয়ার্ডে ২৭টি খাল রয়েছে। টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের লৌহজং নদীর বেলকুচি রোড থেকে জালাল পন্ডিতের বাড়ি পর্যন্ত ১টি খাল। ১১নং ওয়ার্ডের বেড়াবুচনা পানির ট্যাংক থেকে লৌহজং নদী পর্যন্ত ১টি খাল। দক্ষিণ বেড়াবুচনা মেইন রোড থেকে অলোয়া পাইকোস্তা পর্যন্ত ১টি খাল। ১৮নং ওয়ার্ডে সাবালিয়া বটতলা থেকে জেনারেল হাসপাতাল পর্যন্ত ১টি এবং জেনারেল হাসপাতাল থেকে কোদালিয়া খাল। এই ৫টি খালের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শহরের সাবালিয়া খালটি টাঙ্গাইল শহরের ময়মনসিংহ সড়কের বায়তুন নূর জামে মসজিদের পাশ থেকে সাবালিয়া পাঞ্জাপাড়া হয়ে সাবালিয়া বটতলা কালভার্ট হয়ে বৈরান নদীতে সংযোগ হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী মহল প্রথমে ময়লা আর্বজনা দিয়ে খালটি কৌশলে ভরাট করে প্রথমে টিন দিয়ে সীমানা প্রাচীর গড়ে তুলে। কিছুদিন পর সেখানে রাতারাতি ইটের দেয়াল নির্মাণ করে। এর কয়েক বছর পর সেই ইটের দেয়াল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এভাবেই বহুতল ভবন নির্মাণ করে সাবালিয়া খালের চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছে।

 

স্থানীয়রা জানায়, খালের ওপর সীমানা প্রাচীর, আধা-পাকা ঘর, টিনশেড ঘর ও পরে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। এদিকে সরকারি কুমুদিনী কলেজ গেট-সুরুজ সড়কে সাবালিয়া বটতলা এলাকায় খালের ওপর কালভার্ট থাকলেও দক্ষিণ পাশে খাল চেনার কোনো উপায় নেই। কালভার্টের দক্ষিণ পাশে রফিকুল ইসলাম নামে একজন সীমানা প্রাচীর ও বহুলতল ভবন নির্মাণ করায় খালের কোনো চিহ্ন নেই। তার মতো সাইদুর রহমান, ইদু মিয়া, মো. হারুন মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়ারাও খালের জায়গা দখল করে বিনা বাধায় সীমানা প্রাচীরসহ বহুতল ভবণ নির্মাণ করেছেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইল পৌরসভাও খাল দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেছে।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) টাঙ্গাইলের ঊর্ধ্বতন গবেষণা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান, টাঙ্গাইল শহরের ২৭টি খালের বিষয়ে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। নদী, খাল, বিল ও জলাশয় উদ্ধারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া মহামান্য হাইকোর্টেরও দিকনির্দেশনা রয়েছে।

 

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর জানান, পৌরসভা কোন খালের ওপর রাস্তা নির্মাণ করেছে এমনটা তার জানা নেই। ড্রেন খাল ঘেঁষে নির্মাণ হয়ে থাকতে পারে।

 

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মির্জাপুর অংশের ২২ কিলোমিটার এলাকায় নদী পুনঃখনন ও নদী তীর সংরক্ষণে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। শহরের খালগুলো পুনরুদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়সারুল ইসলাম জানান, দখলকৃত খালগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উদ্ধার করা হবে। শহরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদী দখল-দূষণমুক্ত করতে ইতোমধ্যে ডিপিপি করা হয়েছে। ওই ডিপিপি সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version