সুষম সারের ব্যবহার, সার, বীজ ও কীটনাশক কৃষকদের ক্রয় ক্ষমতার নাগালে থাকায় এবং আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে এবার উচ্চ ফলনশীল রোপা আমনের বাম্পার ফলন ও বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় মাদারীপুরে কৃষকের মুখে হাসির ঝলক দেখা দিয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক হাজার আট শত হেক্টরেরও বেশি জমিতে রোপা আমনের আবাদ হয়েছে।
কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান কর্তন, মাড়াই ও ঘরে তোলা নিয়ে। কৃষক ব্রি ধান ৩৯, বিনা ধান ৭, বিনা ধান ১০, ব্রি ধান ৬২, ব্রিধান ৭২, ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান-৫১, ব্রি ধান-৫২, ব্রিধান-৭৫, ব্রিধান-৮৭ ও ব্রিধান-৯১ জাতের ধান চাষ করায় এ বছর কাক্সিক্ষত মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩.১৮ ধরা হয় ৭৮ হাজার ৪৪০ টন। নতুন ধানের চালের কেজি ৪৫ টাকা ধরে যার আনুমানিক বাজার মূল্য হবে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯ হাজার ৮শ টাকা।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে মাদারীপুর জেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ১৬০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৯৬০ হেক্টর। এর মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর, কালকিনি উপজেলায় ৯ হাজার ৩৮১ হেক্টর, রাজৈর উপজেলায় ২ হাজার ৪২৯ হেক্টর ও শিবচর উপজেলায় ৪ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে।
বোনা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৮শ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯শ হেক্টর। মাঠে ধানের অবস্থা খুবই ভালো। চালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩.১৮ ধরা হলে ৭৮ হাজার ৪৪০ টন চাল উৎপাদন হবে বলে কৃষকরা আশাবাদী। অনুক‚ল আবহাওয়ায় উচ্চ ফলনশীল রোপা আমনের চাষ করে বাম্পার ফলনের মুখ দেখছেন মাদারীপুরের কৃষকরা। রোগবালাই কম ও ধানে চিটা না হওয়ায় এবং বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলার পাঁচ উপজেলার শত শত কৃষকের জমির ধান এখন বাতাসে দুলছে।
বিনা ধান ৭, ব্রিধান ৩৯ ও ব্রিধান ৭৫ জাতের রোপা আমন ধান কর্তন, মাড়াই ও ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কয়েকদিনের মধ্যেই অন্যান্য জাতের ধানও কর্তন শুরু হবে। মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের নিজ বাজিতপুর গ্রামের মিরাজুল সিকদার। তিনি উচ্চ ফলনশীল ব্রিধান ৮৭ জাতের রোপা আমন ধানের চাষ করে বাম্পার ফলনের মুখ দেখছেন। গত বছর তিনি ৫ একর জমিতে রোপা আমন চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ বছর তিনি ৬ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্রিধান ৮৭ জাতের রোপা আমন চাষ করে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন।
একরে ৫০ থেকে ৫৫ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন তিনি। আগামীতে আরো বেশি জমিতে রোপা আমনের চাষ করবেন বলে তিনি জানান। মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের মাস্টার মিজানুর রহমান জানান, তিনি ৬৩ শতাংশের এক বিঘা জমির পাট কেটে বোনা আমন ধানের চাষ করেছেন। ধান খুবই ভালো দেখায়। রোগ, বালাই ও ধানে কোনো চিটা হয়নি। এক বিঘা জমিতে তার ৪০ থেকে ৪৫ মণ ধান উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা করছেন। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের সদানন্দ মন্ডল জানান, তিনি এক একর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ধান ভালো হয়েছে। একরে তার ৫০ মণ ধান হবে বলে তিনি আশাবাদী।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, কালকিনি উপজেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪০৬ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৩৮১ হেক্টর। ব্রিধান-৭৫, ৮৭ ও বিনা ধান ১৭ জাতের বাম্পার ফলন হয়েছে।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ জানান, মাদারীপুর জেলায় রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার ১৬০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২১ হাজার ৯৬০ হেক্টর। বোনা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৮শ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৯শ হেক্টর। মাঠে ধানের অবস্থা খুবই ভালো। চালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩.১৮ ধরা হলে ৭৮ হাজার ৪৪০ টন চাল উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদী। আবহাওয়া অনুকূল ছিল, পোকামাকড়ের কোনো সমস্যা ছিল না। কৃষককে কারিগরি জ্ঞান, উঠান বৈঠক ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সারের কোনো সমস্যা ছিল না। বীজ ও সারের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। খাদ্যের উদ্বৃত্ত অব্যাহত ধারা বজায় থাকবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য