-->
শিরোনাম

উদ্বোধনের অপেক্ষায় মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর টার্মিনালের নির্মাণকাজ

এইচ এম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার
উদ্বোধনের অপেক্ষায় মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর টার্মিনালের নির্মাণকাজ
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে নির্মিয়মান সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল

কক্সবাজারের ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনালের নির্মাণকাজের দরপত্রের মূল্যায়নের কাজ প্রায় শেষ। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন। এদিন তিনি কক্সবাজার রেললাইন, আইকনিক রেলস্টেশন, খুরুশকূল ব্রিজসহ ১২টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।

 

টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরুর অপেক্ষা থাকলেও সাগর থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার লম্বা চ্যানেল বা জাহাজ চলাচলের নৌপথ আগেই তৈরি হয়েছে। মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় এ নৌপথ খনন করেছিল কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিপিজিসিবিএল। ২০ সেপ্টেম্বর চ্যানেলটি বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ নভেম্বর এই চ্যানেল উদ্বোধন ও টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এরপরই টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হবে। কাগজে-কলমে চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন টার্মিনাল হিসেবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে এটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শুরুতে ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা এড়াতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির পাশাপাশি এটিকে বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কার্যত এটি দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর।

 

প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এই টার্মিনাল চালুর কথা রয়েছে। এটি চালু হলে একসঙ্গে দুটি বড় জাহাজ ভেড়ানো যাবে। এর একটি হবে কনটেইনারবাহী, আরেকটি সাধারণ পণ্যবাহী। চট্টগ্রাম বন্দরে এখন যেসব জাহাজ ভেড়ানো যায়, তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি ক্ষমতার কনটেইনার ও সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ ভেড়ানো যাবে এই টার্মিনালে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

 

তারা বলছেন, এত দিন দেশে কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর ছিল না। তাই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে খরচ যেমন বেশি হচ্ছে, তেমনি সময়ও বেশি লাগছে। মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানি সহজ হবে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা কলম্বোর মতো বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানির দরকার হবে না। এতে সময় ও অর্থ খরচ কমবে।

 

মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলের শেষ প্রান্তে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহারের দুটি জেটি রয়েছে। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে প্রকল্পের সরঞ্জামবাহী জাহাজ ভেড়ানো শুরু হয়। এ পর্যন্ত ১২৩টি জাহাজে প্রকল্পের সরঞ্জাম ও কয়লা আনা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির অদূরে ও সাগর উপকূল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভেতরে নির্মাণ হবে গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের একনেকে অনুমোদন হয় ২০২০ সালের মার্চে। বন্দর ও সংযোগ সড়কসহ এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। প্রকল্প খরচের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। আর সরকার ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা ও চট্টগ্রাম বন্দর ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা জোগান দিচ্ছে।

 

একনেকে অনুমোদনের পর ২০২০ সালের জুলাই মাসে টার্মিনালের নকশা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর দরপত্র প্রণয়ন করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। দরপত্রে পেন্টাওশেন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের নেতৃত্বে যৌথভাবে দুটি প্রতিষ্ঠান একটি দরপত্র জমা দেয়। এই দরপত্র মূল্যায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের পর ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হবে।

 

চট্টগ্রাম বন্দর পর্ষদের সাবেক সদস্য মো. জাফর আলম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার হবে মাতারবাড়ী বন্দর। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর না হওয়ায় যে আক্ষেপ ছিল, তা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পুষিয়ে দেবে। মাতারবাড়ীকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে শিল্পায়নের নতুন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version