-->
শিরোনাম

পাইকগাছায় ঘরের চালে চালে চালকুমড়া

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
পাইকগাছায় ঘরের চালে চালে চালকুমড়া
পাইকগাছার গ্রামে ঘরের চালে চালে চালকুমড়া শোভা পাচ্ছে

খুলনার পাইকগাছায় ঘরের চালে চালে চালকুমড়ার ছড়াছড়ি। ঘরের চালে এ সবজি ফলানো হয় বলে এটি চালকুমড়া নামে পরিচিত। তবে চাল কুমড়া শুধু চালে নয়, এ সবজি এখন মাচায় এবং জমিতেও চাষ করলে ফলন ভালো হয়। চালকুমড়া সবজি হিসেবে আমাদের দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। সবুজ কচি চালকুমড়া তরকারি হিসেবে খাওয়া হয়। শুধু চালকুমড়াই নয় এর কচি পাতা ও ডগাও খাওয়া যায়। বড় হলে চুনের মতো সাদা চালকুমড়া দিয়ে বড়ি, মোরব্বা ও হালুড়া তৈরি করা যায়।

 

পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাড়ির ঘরের চালে চালে চুন সাদা চালকুমড়া শোভা পাচ্ছে। চালকুমড়া চাষ করতে ঘরের কোনায় মাদায় গাছ তৈরি করা হয়। ঘরের চালে চালকুমড়া লাগাতে জমিতে কোনো চাষ করা লাগে না। ঘরের কোনায় পতিত জায়গায় চালকুমড়া গাছ লাগিয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

 

উপজেলার হিতামপুর গ্রামের হায়দার আলী জানান, তার ঘরের কোনায় মাদা করে চারটি চালকুমড়ার বিজ বপন করেছিল। গাছ বড় হয়ে ঘরের চাল ঢেকে যায়। চারটি গাছে একশর বেশি চালকুমড়া হয়েছিল। সবুজ চালকুমড়া ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে। আরো প্রায় ৪০টি চালকুমড়া ঘরের চালে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। কুমড়া বড়ি তৈরিতে চালকুমড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শীতকালে কুমড়া বড়ি তৈরি করার সময় বিক্রি করবে। চারটি গাছের কুমড়া থেকে ১০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

 

দেশে উন্নত ফলনশীল চালকুমড়ার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যা বরো মাস চাষ করা যায়। এর মধ্যে বারি চালকুমড়া-১ অন্যতম। হাইব্রিড জাতের বীজও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব জাতের মধ্যে জুপিটার, ভেনাস, নিরালা, বাসন্তি, পানডা, মাধবী অন্যতম। এসব জাতের বীজের গাছ থেকে বারো মাস চালকুমড়া পাওয়া যায়। চালকুমড়া বসতবাড়িতে লাগাতে ঘরের কোণে মাদা তৈরি করে তাতে ৩-৪টি বীজ বপন করতে হবে। চারা গজালে ও একটু বড় হলে বাঁশের কঞ্চি বা পাট কাঠি চারার গোড়ায় পুঁতে দিয়ে চারাগুলো চালায় তুলে দিতে হবে।

 

আর জমিতে চাষ করলে জমি ভাল করে ৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। তারপর জমিতে মাদা তৈরি করে ৪-৫টি বীজ বপণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন বৃষ্টির বা বন্যার পানি জমে না থাকে। এরপর ২.৫ ফুট চওড়া ২ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে। ২ থেকে ২.৫০ মিটার দূরে দূরে মাদা তৈরি করে বীজ বুনতে হবে। তাছাড়া নার্সারি থেকে চালকুমড়ার চারা সংগ্রহ করা যায়। চারা লাগানোর দুই মাস পর থেকে গাছে ফলন ধরে।

 

কুমড়ো দুই রকমের হয় মিষ্টিকুমড়া এবং চালকুমড়া। মিষ্টিকুমড়া ফলজাতীয় সবজি। মিষ্টিকুমড়ার আকার পেটমোটা গোল। জালিকুমড়া সবুজ রঙের হয় এবং পাকা অবস্থায় এর ভেতরের অংশ উজ্জ্বল কমলা বর্ণের হয়ে থাকে। চালকুমড়া পুষ্টিকর একটি সবজি। এতে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার রয়েছে। তাই চালকুমড়ার উপকারিতা অনেক।

 

যক্ষা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাস্ট্রিকসহ বহু রোগের উপশম করে চালকুমড়া। চালকুমড়া তরকারি হিসেবে খাওয়া ছাড়াও মোরব্বা, হালুয়া, পায়েস এবং কুমড়া বড়ি তৈরি করেও খাওয়া হয়। শুধু চাল কুমড়াই নয় এর কচি পাতা ও ডগাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়।

 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার অসিম কুসার দাশ বলেন, বিনা চাষে কম খরচে ঘরের চালে চাল কুমড়া ফলানো যায়। তাই গ্রামের বাড়ির চালে চালে কৃষকরা চালকুমড়ার আবাদ করছে। সবজি হিসেবে চালকুমড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষকদের পতিত জমি ফেলে না রেখে চালকুমড়া বা মিষ্টি কুমড়া লাগাতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version