-->
শিরোনাম

খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ
খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত গাছিরা
রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুতের কাজ করছেন গাছি

মানিকগঞ্জে শীত পড়তে শুরু করেছে। সকাল ও সন্ধ্যায় হালকা শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালে হালকা কুয়াশায় ঢেকে পড়ছে চারদিক। শীতের আমেজের শুরুতে মানিকগঞ্জের গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য গাছ প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে। প্রতিদিন সকালে হালকা শীত উপেক্ষা করে গাছিরা তাদের গাছ কাটার যন্ত্র নিয়ে গাছ পরিচর্যা করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। মানিকগঞ্জ জেলায় আগে বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষ শীতকালীন সময়ে অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিল খেজুর গাছের ওপর। বর্তমানে খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। যা আছে সেগুলো এখন রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত করছেন গাছিরা।

 

সাটুরিয়া উপজেলা ঘুরে গাছিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার উপজেলাগুলোতে এক সময় অনেক খেজুর গাছ ছিল। এখন জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কম বেশি খেজুর গাছ আছে। অনেকে ইটভাটা মালিকদের কাছে গাছ বিক্রি করে দিয়েছে। তাই দিন দিন খেজুর গাছ এর সংখ্যা এ জেলায় কমে যাচ্ছে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ মধ্যকান্দি এলাকায় খেজুরের রস সংগ্রহকারীরা প্রতিদিন বিকালে গাছি দা, নলি, কোমরে বাঁধা রশি বালধারা কাধে নিয়ে রাস্তার পাশে ও মাঠের ভিতর খেজুর গাছের চাচ দেওয়া অংশ কেটে ছোট-বড় ভাড় কাঁনাছ পরিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে।

 

মানিকগঞ্জের সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ আছে হরিরামপুর উপজেলায়। এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে প্রবেশ করলেই দেখা মিলে, রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছগুলোকে প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। শীত এলেই খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরির ধুম পড়ে যায় গ্রামগুলোতে। বাংলাদেশে এক নামে পরিচিত হাজারী গুড় এই হরিরামপুরেই তৈরি হয়ে থাকে।

 

জেলার কৃষি অফিস ও বিশেষ তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এক সময় এই অঞ্চলে কৃষকরা খেজুর গাছের বাগান তৈরি করত বাণিজ্যিকভাবে। প্রাকৃতিকভাবেও এটা জন্মাতো। এই খেজুর গাছকে ঘিরে তৈরি হতো গুড়ের পাটালি উৎসব। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে অল্পসংখ্যক গাছিরা খেজুর গাছ এখন কাটে। এ কারণে মানিকগঞ্জ থেকে আগে অনেক খেজুরের গুড় রপ্তানি হতো, যা এখন অনেক কম হয়। কৃষকরা খেজুর গাছ নতুন করে আর রোপণ করছে না। যা আছে তাও নিধন হয়ে যাচ্ছে।

 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, খেজুর গাছ সংরক্ষণ করার জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উন্নতমানের গুড় উৎপাদন করার জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে গাছ কাটার জন্য গাছি কমে যাওয়ার কারণে খেজুর গাছ লাগানোয় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে খেজুর গাছ লাগানোর জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গত বছর এ উপজেলা থেকে উন্নতমানের সুস্বাদু গুড় দেশের অভ্যন্তরসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হয়েছিল।

 

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ কেটে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসিতে রস সংগ্রহ করা হয়। শীতের মৌসুমে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে গাছের মাথার সাদা অংশ পরিষ্কার করে গাছে হাড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সকাল হলে সেই রসের হাড়ি নামিয়ে আনা হয়। খেজুরের রস খাওয়ার সবচেয়ে আদর্শ সময় হলো ভোরবেলা। কারণ সারারাত ধরে রস জমতে থাকে এবং সকাল পর্যন্ত এই রস টাটকা থাকে। স্বাদ গন্ধও থাকে সবচেয়ে ভালো।

 

খেজুরের রস কাঁচা খাওয়া যায়, আবার জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেও খাওয়া যায়। গুড়ে আয়রন বা লৌহ বেশি থাকে এবং হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। যারা শারীরিক দুর্বলতায় ভোগেন, কাজকর্মে জোর পান না, খেজুরের রস তাদের জন্য দারুণ উপকারী। খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে ১৫-২০% দ্রবীভূত শর্করা থাকে। খেজুরের গুড় আখের গুড় থেকেও বেশি মিষ্টি, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। খেজুরের গুড়ে প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেল সবই রয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version