-->
শিরোনাম

বিলুপ্তির পথে বাঘাইড়, নিষিদ্ধ হলেও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে

জহুরুল ইসলাম হালিম, রাজবাড়ী
বিলুপ্তির পথে বাঘাইড়, নিষিদ্ধ হলেও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে
পদ্মায় শিকার করা বাঘাইড় মাছ হাতে জেলে

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের পদ্মায় নির্বিচারে শিকার ও বিক্রি করা হচ্ছে নিষিদ্ধ মহাবিপন্ন প্রজাতির বাঘাইড় মাছ। রীতিমতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে চড়া দামে এই মাছ বিক্রি করা হচ্ছে। বাঘাইড় মাছ শিকার ও বিক্রয় বন্ধে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের। এভাবে অবাধে বাঘাইড় মাছ নিধন অব্যাহত থাকলে অচিরেই বিলুপ্তি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

জানা যায়, প্রমত্তা পদ্মা-যমুনা মিলিত হয়েছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটরের অদুরে। পদ্মা-যমুনার এই মোহনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এ সকল মাছের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ কর্তৃক চিহ্নিত মহাবিপন্ন প্রজাতির বাঘাইড় মাছ। সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই শিকার করা ওই সকল বাঘাইড় মাছ প্রকাশ্যে উচ্চমূল্যে বিক্রিও করা হচ্ছে।

 

এ মাছ বিক্রির জন্য ইতোমধ্যে দৌলতদিয়া ঘাটের মাছ ব্যবসায়ীরা সারা দেশে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। অথচ মহাবিপন্ন প্রজাতির এ মাছ ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন আইনত নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে আইনের তোয়াক্কা না করেই চলছে বেচাকেনা। বাঘাইড় মাছ বাংলাদশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ২নং তফসিলভুক্ত একটি সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী। এই আইন অনুযায়ী বাঘাইড় মাছ শিকার, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন কিংবা দখল রাখার অপরাধ সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদন্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডই হতে পারে।

 

স্থানীয়রা জানান, পদ্মা নদী থেকে শিকার করা বাঘাইড় মাছ প্রায় প্রতিদিনই দৌলতদিয়া ঘাটে মাছের আড়তে বেচাকেনা হয়ে থাকে। ৫ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত বাঘাইড় মাছ এ এলাকায় বেশি ধরা পরে। আর মাঝে মাঝে বিশাল আকৃতির দু’একটা ধরা পড়লে ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে মাছ ব্যবসায়ীরা। সেই সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একাধিক মিডিয়ায় খবরটি ছড়িয়ে দেয়া হয় সারা দেশে। এরপর সারা দেশের ভোজন রসিকরা বড় আকৃতির ওই সকল বাঘাইড় মাছ কিনতে যোগাযোগ শুরু করে দৌলতদিয়া ঘাটের মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। এভাবে উচ্চমূল্যে বাঘাইড় মাছ বিক্রি হয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

 

পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করা জেলেরা জানান, ৫/১০ কেজির বাঘাইড় মাছ পদ্মা নদীতে প্রায় প্রতিদিনই পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে বড় আকারের বাঘাইড় মাছও জালে ধরা পড়ে। বিক্রিতে কোনো সমস্যা হয় না। কারণ বাঘাইড় মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়। আর যদি বড় সাইজের বাঘাইড় মাছ ধরা পরে, তাহলে মাছ ব্যবসায়ীরা নদীতেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিনে নেয়। তারা এখনো পর্যন্ত কোনোদিন বাঘাইড় মাছ শিকার করার দায়ে দন্ডিত হননি বলে জানান।

 

চাঁদনী অ্যান্ড আরিফা মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারীরা মো. চান্দু মোল্লা জানান, পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় প্রচুর পরিমাণ বাঘাইড় মাছ ধরা পড়ে এবং তিনিও মাঝে মধ্যে জেলেদের কাছ থেকে কিনে বিক্রি করে থাকেন। একটা মাটামুটি বড় বাঘাইড় মাছের দাম ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দাম হয়। যদি এত দামের মাছটি প্রশাসনের কেউ জব্দ করেন, তাহলে তার বড় অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ভয়ে তিনি বাঘাইড় মাছ না কেনারই চেষ্টা করেন। যদি কখনো কেনেনও তবে সেই মাছ পরিচিত ব্যাক্তির কাছে বিক্রি করে থাকেন, যাতে কোনো ঝামেলা না হয়।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক জোট আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এর লাল তালিকায় রয়েছে ‘মহাবিপন্ন’ বাঘাইড় মাছ।

 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদশ সুপ্রিম কার্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অভিজিৎ সোম বলেন, বাঘাইড় মাছ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে শিকার, পরিবহন ও বিপণন দন্ডনীয় অপরাধ। তবে মৎস্য আইনে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। বিপন্ন প্রজাতির এই বাঘাইড় মাছ রক্ষায় আইনের অসামঞ্জস্যতা দূর করে সময়োপযোগী ও বাস্তবতার নিরীখে মৎস্য বিভাগ ও বন বিভাগের সম্বয়ে আইনটি সংস্কার করা প্রয়োজন।

 

রাজবাড়ী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বাঘাইড় মাছ শিকার বা বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও মৎস্য আইনে এ ধরনের কিছু নেই। তবে স্থানীয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন বলে তিনি জানান।

 

গোয়ালন্দ ইউএনও মো. জাকির হোসেন জানান, পদ্মা-যমুনার মোহনায় প্রতিনিয়ত জেলেদের জালে বাঘাইড় মাছ ধরা পড়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে তাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ যাচাই-বাছাই করে নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version