-->
শিরোনাম

তুলা চাষে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
তুলা চাষে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা
ঝালকাঠির গাবখান গ্রামে তুলা চাষের বাগান

ঝালকাঠি সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে তুলা চাষ করে আর্থিক লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা। এসব তুলা সরাসরি মিল কর্তৃপক্ষ কিনে নেয়ায় তাদের লাভ হচ্ছে বেশি। যার ফলে তুলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন স্থানীয় আরও অনেক চাষি। সদর উপজেলার গাবখান-ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের কৃষিভিত্তিক গাবখান গ্রামে যশোর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে ২০১১ সালে শুরু হয় রূপালি-১ এবং হোয়াইট গোল্ড জাতের তুলার চাষ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক যুগ ধরে তুলা চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন বাগান-মালিকসহ এখানকার কৃষক ও শ্রমিকরা।

 

স্থানীয় তুলাচাষিরা জানান, একটু উঁচু জমিতে কান্দি পদ্ধতিতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তুলার বীজ লাগানো শুরু হয়। বীজ বপনের ৫৫ থেকে ৬০ দিন পরে গাছে ফুল ধরে। সেই ফুল থেকে বের হয় তুলা। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চৈত্র থেকে বৈশাখ মাসজুড়ে তারা মাঠ থেকে তুলা সংগ্রহ করেন। বিগত বছরগুলোতে একরপ্রতি ১০ থেকে ১৫ মণ তুলার ফলন হয়েছে।

 

তবে এ বছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি বেশি হওয়ায় অনেক গাছ নষ্ট হয়েছে। তাই এ বছর তুলার ফলন কিছুটা কম হওয়ার কথা জানালের কৃষকরা। তারা মনে করেন, সরকার তুলা চাষের দিকে একটু নজর দিলে অনেক কৃষকের কর্মসংস্থান হবে এবং তুলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজার নিয়েও কোনো শঙ্কা থাকবে না।

 

কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘২০১১ সালে যশোর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আমি ৮ বিঘা জমিতে তুলা চাষ শুরু করি গাবখান এলাকায়। সেই থেকে এখনো আমি এই তুলা চাষ করে যাচ্ছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে তুলা চাষে কোনো লোকসান হয় না। স্থানীয় বেকার ও বয়স্ক লোক দিয়ে এ তুলা মাঠ থেকে সংগ্রহ করে থাকি। তাতে তাদের সংসার খরচটাও এই সিজনে ভালোভাবে চালাতে পারেন। তুলা আমি মাঠ থেকেই যশোরসহ বিভিন্ন মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকি। শুধু তুলাই নয়, এ তুলার বীজ থেকে তৈল ও খৈড় তৈরি করে বাড়তি আয় করাও সম্ভব।

 

দিনমজুর লাল মিয়া হওলাদার বলেন, ‘গাছে ফুল ধরেছে। আর কয়েক মাস পরই তুলার ফলন হবে। আমি কয়েক বছর ধরে এ বাগানে কাজ করি। বীজ রোপণ এবং পরিচর্যা করি দৈনিক মজুরি হিসেবে। তুলা ফলনের পর মাঠ থেকে তুলা তুলে দিয়ে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা মজুরি পাই। মৌসুমে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি তুলা মাঠ থেকে সংগ্রহ করতে পারি। আমার বয়স হয়েছে এখন আর কেউ কাজে নেয় না, এই তুলাটা চাষ হয় বলে আমি এখানে কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারি।’

 

আরেক দিনমজুর হেনারা বেগম বলেন, ‘গাবখান এলাকায় তুলা চাষ শুরু হওয়া থেকে আমি প্রতিবছর এখানে কাজ করি। তবে রোপণের কাজ করি না, আমি শুধু গাছ থেকে তুলা তুলি। আমার স্বামী একজন দিনমজুর, তার আয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়, তাই এ তুলা তুলে যে টাকা পাই তা থেকে আমাদের সংসার ও ছেলেমেয়ের খরচ চালাই।’

 

কটন ইউনিট কর্মকর্তা (গাবখান ইউনিট) সৈয়দ শাহিন হোসেন গাজী বলেন, ‘ঝালকাঠি গাবখান থেকে এ তুলা ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া হয় যশোরের ঝিকরগাছার একটি বেসরকারি জিনার মিলে। সেখানে মেশিনের মাধ্যমে জিনিং করে বিভিন্ন কটন মিলে বিক্রি করা হয়। তুলা চাষকে কেন্দ্র করে ঝালকাঠির স্থানীয় প্রান্তিক কৃষকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। ঝালকাঠিতে অনেক পতিত জমি থাকায় এ অঞ্চল তুলা চাষের উপযোগী।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version