-->
শিরোনাম
১৯০ পদের বিপরীতে শূন্যপদ ৯০

জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

জনবল সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা। বর্তমানে ৫০ শয্যা হাসপাতালের ১৯০ জনবলের বিপরীতে শূন্য রয়েছে ৯০ পদ। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক কাজ করেন অন্য জায়গায়। প্যাথলজি বিভাগ চালু থাকলেও নেই কোনো টেকনিশিয়ান, এক্সরে মেশিন নষ্ট, আল্ট্রাসনোগ্রাম কখনো করা হয়, কখনো করা হয় না। পরিচ্ছন্নকর্মী না থাকায় অপরিচ্ছন্ন এবং বাথরুমের দুর্গন্ধময় পরিবেশের মধ্যে সেবা নেন সাধারণ রোগীরা। জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে উন্নত সেবা দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গুরুত্বপূর্ণ উপকূলীয় এ উপজেলায় বর্তমানে ৩ লাখেরও অধিক মানুষের বসবাস। পাশাপাশি কয়েকটি উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা অনেকটাই নির্ভর করে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর। ১৯৯০ সালের দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সকল কার্যক্রম এলাকার ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হতো। ১৯৯৫ সালের দিকে পৌর সদরের ৬নং ওয়ার্ডের বাতিখালী মৌজায় ৫.৮০ একর সম্পত্তির ওপর স্থানান্তরিত করা হয়।

 

১৯৯৭ সালে ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। নতুন ভবন নির্মিত হলেও এখনও নানা সংকটে জর্জরিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। পর্যাপ্ত আবাসিক ব্যবস্থা না থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকের থাকতে হয় বাইরে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। রয়েছে তীব্র জনবল সংকট।

 

হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন হাসপাতালের একমাত্র অবেদিনবিদ চিকিৎসক। ১১ জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ২ জন চিকিৎসক। শূন্য রয়েছে ডেন্টাল সার্জনের পদ। মেডিকেল অফিসার ও সহকারী সার্জনের ৭ পদের বিপরীতে কর্মরত ৪ শূন্য রয়েছে ৩। মেডিকেল অফিসার ১ জন কর্মরত রয়েছে।

 

অন্যদিকে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। ৩২ জন সিনিয়র স্টার্ফ নার্সের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ২২ জন, শূন্য রয়েছে ১০টি পদ। মিড ওয়াইফ ৪টি পদে কর্মরত ৩, শূন্য ১। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৫ পদের কর্মরত ১, শূন্য ৪। গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সহকারীর পদটি শূন্য রয়েছে। উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৪ পদে কর্মরত ২, শূন্য ২। ক্যাশিয়ার ও স্টোর কিপারের ২টি পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ১৩ জনের বিপরীতে ১২ জন কর্মরত রয়েছে, শূন্য রয়েছে ১টি পদ। ৪ স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত ১, শূন্য ৩টি পদ। ফার্মাসিস্ট ২ জনের বিপরীতে কর্মরত ১, শূন্য ১।

 

এছাড়াও কম্পিউটার অপারেটরের ১টি ও হেলথ এডুকেটর ১টি পদ শূন্য। প্রধান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ১ জন কর্মরত রয়েছে। পরিসংখ্যান বিদ ১টি ও ১টি সহকারী নার্সের পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ইপিআই পদে ১ জন এবং কার্ডিওগ্রাফার পদে ১ জন কর্মরত রয়েছে। কম্পাউন্ডারের ১টি পদ শূন্য রয়েছে। ১ জন ড্রাইভার কর্মরত রয়েছে। স্বাস্থ্য সহকারীর ৬৫ পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছে ৪২, শূন্য রয়েছে ২৩টি পদ। হারবাল এসিট্যান্ড পদে ১জন কর্মরত রয়েছে। জুনিয়র ম্যাকানিকের পদ শূন্য রয়েছে।

 

অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৩টি পদে ২ জন কর্মরত রয়েছে, শূন্য রয়েছে ১টি পদ। অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ১টি পদ শূন্য রয়েছে। টিবি অ্যান্ড ল্যাপরোসি কন্ট্রোল এসিট্যান্ড পদে ১ জন কর্মরত রয়েছে। ২টি সিকিউরিটি গার্ড ও ২টি আয়া পদ শূন্য রয়েছে। ২ জন কুকের স্থলে কর্মরত রয়েছে ১ জন। মালি পদ শূন্য রয়েছে। অফিস সহায়ক ৪ জনের স্থলে কর্মরত ১, শূন্য রয়েছে ৩। ৫টি পরিচ্ছন্নকর্মী ও ৩টি ওয়ার্ড বয়ের পদ শূন্য রয়েছে।

 

এদিকে স্বল্প জনবল দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। একদিকে জনবল সংকট, অন্যদিকে ৪ জন চিকিৎসক অত্র হাসপাতালের বেতন-ভাতা ভোগ করলেও কর্মরত থাকেন ভিন্ন হাসপাতালে। প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে ৭০ থেকে ৮০ জন রোগী। প্রতিমাসে ২৫০ থেকে ৩০০ গর্ভবতী নারী গর্ভকালীন সেবা নিয়ে থাকেন। রয়েছে জরুরি ও বহির্বিভাগ। সবমিলিয়েই জনবল সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুজন কুমার সরকার বলেন, নানা সংকটের মধ্যেও আমরা গর্ভবতী নারীদের গর্ভকালীন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সরকারের নির্দেশনা রয়েছে ৮৫ ভাগ নরমাল ডেলিভারি নিশ্চিত করা। এটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে না পারলেও আমরা শতভাগ নিশ্চিত করছি। এটি আমাদের অনেক বড় সাফল্য।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নীতিশ চন্দ্র গোলদার বলেন, চরম জনবল সংকটের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে। কিন্তু স্বল্প জনবল দিয়ে জরুরি বিভাগ সহসবখানে সেবা দেয়া অনেক কঠিন। জনবলের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে এটা যেমন সঠিক, আবার স্বল্প জনবল নিয়ে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কয়েক লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি এটিও ঠিক।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version