-->
শিরোনাম

আমনের পালা শেষ, ইরি-বোরোর মৌসুম শুরু

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
আমনের পালা শেষ, ইরি-বোরোর মৌসুম শুরু
হবিগঞ্জের মাধবপুরে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করছেন কৃষকরা

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান কাটা প্রায় শেষ করেছেন কৃষক। এখন ইরি-বোরো ধানের মৌসুম সামনে রেখে ধুমধাম করে বোরো ধানের চারার জন্য বীজতলা প্রস্তুত করছেন তারা। মাধবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার ধান চাষিরা বোরো ধানের বীজতলা তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভালো বীজতলা করতে পারলে তবেই মিলবে ভালো চারা। তাই কৃষক পুরোদমে বীজতলা নিয়ে কাজ করছেন।

 

অগ্রহায়ণ মাস বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন কৃষকরা। তাই বীজতলায় রোদ পড়ে এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করে চাষি। চাষের আগে প্রতি বর্গমিটার জায়গার জন্য ৩-৪ কেজি জৈবসার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করে থাকে। পানি দিয়ে জমিকে থকথকে কাঁদা করে ১ মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে ভেজা বীজতলা তৈরি করা হয়।

 

বীজ বপন করার আগে ৪৮-৭২ ঘণ্টা ধান ভালোভাবে জাগ দিয়ে রাখতে হয়। এ সময় ধানের অঙ্কুর গজাবে। অঙ্কুরিত বীজ, বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হয়। প্রতি বর্গমিটার বীজ তলার জন্য ৮০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। বোরো ধানের বীজতলার চারা যাতে অতিরিক্ত ঠান্ডায় নষ্ট না হয় সেজন্য কৃষক রাতের বেলা চারার উপরে সাদা পলিথিন দিয়ে বা কলার পাতা দিয়ে খুঁটি বা কঞ্চির সাহায্যে ছাউনির মতো করে ঢেকে দেয়। পরদিন সকালে রোদ দেখা দিলে পলিথিন বা কলার পাতার ছাউনি আবার সরিয়ে দেয় রোদ লাগার জন্য। কৃষক বীজতলা প্রতিদিন সকালে একবার করে দেখে আসেন। কারণ বীজতলার চারায় যাতে হলুদ ও পাতা ঝলসানো রোগে আক্রমণ না হয় তাই কৃষক চারায় ইউরিয়া ও জিপসাম সার দিয়ে থাকে। বীজতলা থেকে চারা তোলার ১ সপ্তাহ আগে কৃষক কীটনাশক দিয়ে থাকে। এতে বীজতলার চারা পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।

 

মাধবপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা ইরি-বোরো ধান চাষের জন্য পূর্ব প্রস্ততি হিসেবে বীজতলা তৈরি ও বীজতলায় ধান রোপণ করছেন। কেউবা ধান চাষের জমি প্রস্তুত করছেন। এ সময় শত ব্যস্ততা দেখেও কথা বলতে চাইলে মাধবপুর উপজেলা আদাঐর ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের ধান চাষি মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান চাষ নিয়ে বিপাকে আছি। তবুও আশায় বুক বেঁধে ধানের বীজ বপন করেছি।’

মাধবপুর পৌর শহরের ধান চাষি মো. মন মিয়া বলেন, ‘এ বছর আগের তুলনায় কম পরিমাণ জমিতে বোরো ধান চাষ করব।’

হোসেনপুর গ্রামের ধান চাষি তাহের মিয়া বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলের প্রায় কৃষকই বর্গাচাষি। এদের নিজের জমি নেই। এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করে থাকে। এমনিতেই যে টাকা খরচ করে ধানের চাষ করা হয়, ধান বিক্রয় করে সে টাকা আয় হয় না। এছাড়াও প্রতিটি জমিতে পানি সেচের সুব্যবস্থা না থাকায় বেশি টাকা ব্যয় করে পানি সেচ দিয়ে চাষাবাদ করার সামথ্য সবার নেই।

 

এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, বিগত বছর গুলোতে এ উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ করা হয়েছিল। আশা করছি, এ বছরও বোরো ধানের ব্যাপক আবাদ হবে। তবে তেলের দাম বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/অ

মন্তব্য

Beta version