ভোরের আলো ফোটার আগেই ডালের বড়া তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গাইবান্ধার খামার-বোয়ালী গ্রামের কারিগররা। খোসা ছাড়ানো মাষকালাই ডালের গুড়োর সঙ্গে আতব চালের গুড়ো মিশিয়ে সুস্বাদু এই বড়া তৈরি করা হয়। গ্রামটিতে বছরের অন্যান্য সময়ে বড়া তৈরি হলেও শীতকালেই চাহিদা বেশি থাকায় দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে এখানকার তৈরি ডালের বড়া।
সরেজমিনে শুক্রবার সকালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের খামার বোয়ালী গ্রামের গিয়ে দেখা মেলে রাস্তার দুই ধার দিয়ে সারি সারি বড়া শুকানোর চালি। গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার ভোর থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে পবিরারের সবাই কাজে লেগে পড়েছেন বড়া তৈরিতে। কেউ মেশিনে ভেজানো ডাল তুলে দিচ্ছেন। কেউ বড়া গুটি গুটি করছেন।
কেউবা চাল ও ডালের গুড়ো দিয়ে তৈরি বড়া শুকানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ডালের বড়ির চাহিদা ভালো থাকলেও ডালসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় লাভ কম হয়। এরপরও বংশ পরস্পরায় পেশাকে টিকিয়ে রাখার কথা জানান কারিগররা। বিশেষ প্রক্রিয়ায় বানানো সুস্বাদু এই বড়া রপ্তানি করা সম্ভব বলেও জানান স্থানীয়রা।
বড়া তৈরি কাজ করছিলেন খামার বোয়ালী গ্রামের হৃদয় চন্দ্র মহন্ত। তিনি বলেন, ‘বংশ পরম্পরায় পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন তারা। শীতকালে এর চাহিদা বেশি। তাই এই সময় ব্যাস্ততাও বেশি তাদের। তিনি আরো বলেন, বাপ-দাদাদের দেখে আসছি বড়া তৈরি করতে। ছোটবেলা থেকে আমরাও কাজে নেমে পড়তাম। এখন আমাদের কাজ দেখে নাতি-পুতিরা লেগে পড়ে বড়া তৈরির কাজে। তবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কম হয়।’
কথা হয় আরেক পরিবারের সন্ধ্যা রানি সাহার সঙ্গে, ‘৭ জনের পরিবার তার। প্রতিদিন ৩০ কেজি থেকে ১ মণ বড়া তৈরি করেন। তিনি বলেন, পেটের দায়ে এ কাজ করি। আগে খুব কষ্ট করা লাগতো। চাল বাটতে হতো, ডাল বাটতে হতো। এবার মেশিন কেনায় সেটা দিয়ে অনেকটা সুবিধা হয়েছে। বেশি পরিমাণে কম সময়ে তৈরি করা যায় বড়া।’
নিকিল চন্দ্র সাহা যিনি বড়া তৈরির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এখন খোসা ছাড়ানো মাষকলাই ডাল কিনতে হয় ৭০০ টাকা দরে। তবে বড়া তৈরির করে তা কেজি প্রতি ৩০০-৪০০ টাকা বিক্রি করি। তবে লাভ যা হয় তা সংসারের খরচ চালিয়েও কোনো মতো চলতে পারি।’
তিনি প্রস্তুত প্রনালী জানান, ‘খোসা ছাড়ানো মাষকলাইয়ের ডাল সারা রাত ভিজিয়ে রেখে ভালো করে ধুয়ে নিতে হয়। ডালগুলো আগে পাটায় বেটে নেয়া হলেও এখন বিদ্যুৎ চালিত মেশিনে করা হয়। আধা ঘণ্টা ধরে ব্লেন্ড করতে হয়। একটি বাঁশের ডালায় বা নেটে ছোট ছোট করে সাজিয়ে কড়া রোদে বড়িগুলো শুকাতে হয়।
ওই গ্রামের তপন চন্দ্র মহন্ত বলেন, শীতের ৪-৫ মাস খুব ভালো চলে। বছরের বাকি সয়ম অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তিনি বলেন, আর্থিকভাবে সহযোগিতা করলে এ পেশাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো। তিনি কিছুটা অভিমান করে বলেন, অফিস থেকে নাম লিখে নিয়ে যায় লোন দিবে বলে। ১ মাস হয়ে গেল, আর কোনো খবরই পাওয়া যায়নি।’
এ ব্যাপারে জেলা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় ভোরের আকাশকে জানান, বড়া তৈরির কারিগরদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হবে। যদি কেউ আগ্রহী থাকে তাহলে গাইবান্ধা বিসিক তার পাশে থাকবে। এই শিল্পকে ছড়িয়ে দিতে সার্বিক সহযোগিতাও করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য