চলতি নভেম্বরে উৎপাদনে যেতে পারছে না চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। কর্ণফুলী নদীর ওপর প্রকল্পটি নিয়ে ওয়াসা একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ায় এটি নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে যেতে পারছে না। পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশে প্রায় ৭০ ফুট নিচ দিয়ে একটি পাইপলাইন বসাতে গিয়ে এ চ্যালেঞ্জে পড়ে ওয়াসা।
এ কারণে প্রকল্পের প্রায় সব কাজ শেষ করার পরও উৎপাদনে যেতে পারছে না পানি সরবরাহ প্রকল্পটি। এর আগে চলতি নভেম্বর মাসকেই প্রকল্পটি উৎপাদনে যেতে সময় নির্ধারণ করেছিল ওয়াসা। কিন্তু শিকলবাহা খালের তলদেশের পাইপলাইনের কাজ শেষ না হওয়ার কারণে এখন সবকিছু আটকা পড়েছে। বর্তমানে সৃষ্ট সবকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকল্পটি উৎপাদনে যেতে সময় লাগবে আরো কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ মাস।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশে ২৪ মিটার গভীরে ২৪৭ মিটার দৈর্ঘ্য পাইপলাইন বসানোর কাজ করছে ওয়াসা। খালের গভীরে দেড় মিটার টানেলের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পানি সরবরাহ পাইপলাইন। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এ কাজে পদে পদে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারি সেবা সংস্থাটিকে। গত সেপ্টেম্বরে এ ক্রসিংয়ে পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ করার আশা করেছিলেন ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে চলতি নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে উৎপাদনে যাওয়ার সময়ও অনেকটা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু পাইপলাইনের কাজে পদে পদে চ্যালেঞ্জের কারণে দফায় দফায় কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘প্রকল্পের অধীনে পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশ দিয়ে একটি পানি সরবরাহ পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে। দীর্ঘ এক বছর ধরে এ কাজে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। খালের ক্রসিংয়ে ২৪৭ মিটার দৈর্ঘ্য পাইপলাইনের মধ্যে ২০২ মিটার শেষ করার পর আটকা পড়ে বোরিং মেশিন।
অবশিষ্ট ৪৫ মিটার পাইপলাইনের কাজ শেষ করতে একটি মসজিদ ভাঙতে হবে। ইতোমধ্যে মসজিদ কমিটির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারাও রাজি হয়েছে। মসজিদ ভেঙে পাইপলাইনের কাজ শেষ করে পুনরায় মসজিদটি নির্মাণ করে দেয়া হবে। এসব কাজ শেষ করতে লাগবে আরো কয়েক মাস। এরপর পানি উৎপাদনে যাবে প্রকল্পটি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘ভবিষ্যতে পানির চাহিদা মাথায় রেখে ওয়াসা কর্ণফুলী নদীর ওপারে ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। শেখ হাসিনা পানি সরবরাহ প্রকল্প ১ ও ২ এবং শেখ রাসেল পানি সরবরাহ প্রকল্পের পর ওয়াসার নতুন এ প্রকল্পটি উৎপাদনে যাবে। তাতে উপকৃত হবে নদীর উপারে শিল্প মালিক ও গ্রাহক।
ওয়াসা সূত্র জানায়, বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, সরকারি ও বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি সরবরাহের জন্য ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামে কর্ণফুলী নদীর পাড়ে এই প্রকল্পের জন্য পানি শোধনাগার তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে কর্ণফুলী নদীর বাম তীরে অবস্থিত শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে। প্রায় এক হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটি দক্ষিণ কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ওয়াসার পানি উৎপাদন বাড়বে দৈনিক আরো ৬ কোটি লিটার। যা সরবরাহ হবে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘২০১৯ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে ওয়াসাকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের অধীনে গ্রাহক পর্যায়ে সংযোগের কাজ চলছে। পশ্চিম পটিয়া কালারপুল ব্রিজ সংলগ্ন শিকলবাহা খালের মাটির তলদেশে পানি সরবরাহ পাইপলাইনের কাজ শেষ হলেই ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি উৎপাদনে যাবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য