-->
শিরোনাম

জুমচাষ বন্ধ খাদ্য সংকটে ফিরে আসা বাসিন্দারা

বান্দরবান প্রতিনিধি
জুমচাষ বন্ধ খাদ্য সংকটে ফিরে আসা বাসিন্দারা

চলতি বছরের এপ্রিলে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) আতঙ্কে জীবন বাঁচাতে পাড়া ছেড়ে পালিয়েছিল ৯৭ পরিবার। তাদের মধ্যে ৫৭ পরিবার ফিরে এসেছে। কিন্তু জুমচাষ করতে না পারায় অধিকাংশ পরিবারেই দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। সরেজমিনে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পাইংক্ষ্যংপাড়ায় গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

পাইংক্ষ্যংপাড়ার কারবারি (গ্রামপ্রধান) পিতর বম ভোরের আকাশকে জানান, তাদের পাড়ায় ৯৭ পরিবারের বসবাস। জীবিকা নির্বাহের জন্য এপ্রিল-মে মাসের শুরুতে প্রথম বৃষ্টি হওয়ার পর পাহাড়ে জুমচাষই একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিলে কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের কারণে সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কে জীবন বাঁচাতে প্রথমে জঙ্গলে ও পরে অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয় অধিকাংশ পরিবার। তারা এবার জুমচাষ করতে পারেনি।

 

তিনি ভোরের আকাশকে জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় গত শনিবার ৫৭ পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ২০০ জন ফিরে আসে। কিন্তু এসে দেখেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ঘরের মতো কিছু নেই। জুমচাষ করতে না পারায় পরিবারগুলোতে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ধারদেনা কিংবা স্বজনদের সহায়তায় দিন কাটাচ্ছেন কোনো রকম।

 

পাড়ার একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমস্যা সমাধানে গত ৫ নভেম্বর কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সশরীরে আলোচনা ও বিভিন্ন বিষয়ে সমঝোতার পর এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়া পরিবারগুলোও ফিরতে শুরু করেছে নিজ বাড়িতে। সংকটময় পরিস্থিতিতে জুমচাষ করতে না পারায় ফিরে আসা পরিবারগুলো চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে।

 

জিংপার বম নামে এক বাসিন্দা এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘সন্ত্রাস দমনে কেএনএফের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বন্দুকযুদ্ধের পর আতঙ্কে সবাই পাড়া ছেড়ে পালিয়ে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেয়। এমন পরিস্থিতিতে পাড়ার কেউ জুমচাষ করতে পারেননি। এরই মধ্যে যারা পাড়ায় ফিরে এসেছেন, সবাই খাদ্য সংকটে আছেন।’

 

পাইংক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান বয় থাং বম জানান, তার মৌজায় শংখ মনিপাড়া, রনিনপাড়া, মুনরেমপাড়া, লুংলেইপাড়া, ব্যাঙছড়ি মারমাপাড়া, রেপু তঞ্চঙ্গ্যাপাড়া, ব্যাঙছড়ি পুনর্বাসনপাড়া, কাপ্লাংপাড়া, খামতাংপাড়া ও পাইংক্ষ্যংপাড়াসহ ১২টি পাড়ার লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামতাংপাড়া ও পাইংক্ষ্যংপাড়ার লোকজন। অধিকাংশ পরিবার জুমচাষ করতে পারেনি। লোকজন পাড়ায় ফিরে এলেও সবাই খাদ্য সংকটে পড়েছেন। সংকট উত্তরণে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

 

রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা ভোরের আকাশকে বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পাইংক্ষ্যংপাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেক পরিবার ফিরে এসেছে। খাদ্য সংকটের বিষয়ে বান্দরবান জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হবে।’

 

বম সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি লাল জার লম বম বলেন, ‘খাদ্য সংকটের বিষয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈহ্লার সঙ্গে কথা হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাবে।’

 

বান্দরবান সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহমুদুল হাসান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘দীর্ঘ নয় মাস পর পাইংক্ষ্যংপাড়ায় চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাড়াবাসীদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version