-->

পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখরিত জবইবিল

সাপাহার প্রতিনিধি
পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখরিত জবইবিল
জবইবিল পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে মুখরিত

শীতের আগমনের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলের নওগাঁর সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে পরিযায়ী পাখির বিচরণ শুরু হয়েছে। পরিযায়ী এসব পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিলের চারদিক। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী বিলে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় বিলে জেলেদের আনাগোনাও নেই। যা পরিযায়ী পাখিদের জন্য অভয়াশ্রমের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তাই এমনি নিরাপদ পরিবেশে বাহিরের দেশ হতেও পরিযায়ী পাখিরা শীতের শুরুতেই জবই বিলে আসা শুরু করে দিয়েছে। বিলজুড়ে এখন দেশী-বিদেশী পাখির আনাগোনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। অন্যান্য বছরে তুলনায় এবার শীতের শুরুতে এসব পরিযায়ী পাখি জবই বিলে দলবেঁধে আসতে দেখা গেছে যা প্রাকৃতিক ভাবে বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলের জীববৈচিত্রের পটভুমিতে বলা হয়েছে বিলটি সাপাহার উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৩ কি.মি পশ্চিমে অবস্থিত, জীববৈচিত্র ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই বিল। জবই নামক গ্রাম পেরিয়ে এই বিলের অবস্থান। তাই লোক মুখে জবই বিল নামে পরিচিতি এ বিল। প্রকৃতপক্ষে এই বিলের আদি নাম ডুমরইল। ডুমরইল, বোরা মির্জাপুর, মাহিল ও কালিন্দর এ ৪ বিলের সমন্বয়ে এই জবই বিল। বিলের দক্ষিণে ভারত ঘেঁষা পূর্ণভবা নদীও রয়েছে।

 

ঐতিহ্যবাহী এই জবই বিলের আয়তন প্রায় ১৫শ হেক্টর। বর্ষা মৌসুমে পানি পূর্ণ হয়ে এটি প্রায় ২ হাজার হেক্টরে পরিণত হয়ে যায়। সরকারী হিসেব অনুযায়ী বিলে খাস জমির পরিমান ৪০৩ হেক্টর। অতীতে এলাকায় জনবসতি কম থাকায় সারা বছর ধরে বিলটি কচুরীপানায় ভরে থাকত। বছরের সব সময়ই বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসবাস করত এই বিলে। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠায় পরবর্তীতে বিলের সব কচুরীপানা সরিয়ে মানুষ বিলের নিম্নাংশে চাষাবাদ শুরু করে। বিলের চারিদিকে জনমানবের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব পাখির উপস্থিতি একেবারে শূন্যের কোঠায় দাড়ায় এবং বিলটি প্রায় পাখি শূন্য হয়ে পড়ে।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সম্ভাবনাময় এই বিলের নানামুখী সম্ভাবনা দেখে ২০১৮ সালের দিকে স্থানীয়ভাবে তরুণদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থা নামে একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে বিলের জীববৈচিত্র সংরক্ষণে কাজ শুরু করেন।

 

পরবর্তীতে সাপাহার উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংসদ বর্তমান সরকারের খাদমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের (এমপি) সহায়তায় এলাকায় বিভিন্ন ধরনের প্রচার প্রচারণা শুরু করেন। এ কাজে সম্পৃক্ত হয়ে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীও যোগ দিয়ে কাজের গতিবিধি আরোও বৃদ্ধি করেন। সে বছর থেকেই তারা বিলের পাখি শুমারী বা জরিপ কার্যক্রম শুরু করেন।জবই বিল জীববৈচিত্র সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান (সবুজ) জানান, বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই বিলে পাতি-সরালি, লাল ঝুটি-ভুতিহাস, গিরিয়া হাস, তিলি হাঁস, টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস, ঠেঙ্গি হাঁস, চা পাখি, বেগুনী বক, বাজলা বক, শামুখ খোল, মাছ মুরাল, সাপ পাখি, চখা চখি, হরেক রকম হাঁসের সমাহারে সারা বিল ভরে উঠেছে।

 

তাদের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে এ বিলে দেশী বিদেশী মিলে মোট পাখির সংখ্যা ৫ হাজার ৫৯৩টি, ২০২০ সালে ৭ হাজার ৬৮৩টি এবং ২০২১ সালে ৯ হাজার ৭১২টি। অতীতে এই বিল হতে প্রচুর পাখি শিকার হয়ে থাকলেও বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসন ও জবই বিল জীববৈচিত্র সংস্থার হস্তক্ষেপে পাখি শিকার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

 

বর্তমানে এই অঞ্চলের দর্শনার্থীদের বিনোদনের একটি মাত্র জায়গা এই জবই বিল। সৌন্দর্য পিপাসু মানুষদের জন্য সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিলের নানামুখী দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। মৎস্য অভয়াশ্রম এবং বিল পাড়ে পর্যটকদের ছায়ার ব্যবস্থা ও পরিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রম সৃষ্টির উদ্দেশ্যে 'শোভিত কানন' নামে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী গ্রহণ করেন উপজেলা প্রশাসন।এবিষয়ে ইউএনও আব্দুল্যাহ্ আল মামুন বলেন, পাখিদের অভায়শ্রমের জন্য বিলের পাড়ে "শোভিত কানন" কর্মসূচির মাধ্যমে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, বকুল, সোনালু সহ বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছে নানা রঙের ফুলে ছেয়ে যাবে বিল পাড়। যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে এবং গাছগুলো স্থানীয় ও পরিযায়ী পাখিদের আশ্রয়স্থল হবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

 

মন্তব্য

Beta version