-->
শিরোনাম
দেশের গন্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে বাইরে

পান চাষে ঝুঁকছেন বাঁশখালীর চাষিরা

বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
পান চাষে ঝুঁকছেন বাঁশখালীর চাষিরা
বাঁশখালীর একটি পান বাজার

চট্টগ্রামের বাঁশখালী কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল। মৌসুমি সবুজ শাকসবজি থেকে শুরু করে উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। তারমধ্যে পানও অন্যতম। বাঁশখালীর মিষ্টি ও সুস্বাদু পানের সুখ্যাতি রয়েছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও। তাই বর্তমানে নানাভাবে রপ্তানি হয়ে আসছে এ পান। বাঁশখালী উপজেলার পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকাজুড়ে বর্তমানে সারি সারি পানের বাগান যে কার মন কাড়ে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দৃষ্টিনন্দন পানের বরজ দেখতে চলে আসেন অনেকেই।

 

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের বিখ্যাত শিল্পী শেফালী ঘোষ আর শ্যাম সুন্দর বৈঞ্চবের এ পান নিয়ে গাওয়া গানের সে কলি- ‘মহেষখালী/বাঁশখালীর পানের খিলি তারে বানাইয় খাওয়্যাইতাম’ মনে করিয়ে দেয় ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে এখানকার পানের কদর ও চাহিদার কথা। বাঁশখালীর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা পান চাষের জন্য উর্বর। এখানে পান চাষে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার কৃষক। অনেকে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরায় পান চাষ করে। অনেকেই ঐতিহ্যগতভাবে ধরে রেখেছে এ পান চাষকে। দিনদিন পান চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বাঁশখালীতে ১৪০ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। বর্তমানে চলছে পান চাষের ভরা মৌসুম। তাই বাজারে প্রচুর পরিমাণে পানের সহজলভ্যতা থাকায় গত কয়েকমাস আগে দাম একটু কম হলেও চলতি মাসে পানের দাম চড়া। ফলন বেশি হওয়ায় চাষিরা রয়েছে ফুরফুরে আমেজে। উপজেলার সর্ব দক্ষিণের ইউনিয়ন পুঁইছড়ি এলাকার নাপোড়া এলাকায় পান চাষের সবচেয়ে উপযোগী স্থান। এখানকার পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমাণ পান চাষ হয়ে থাকে।

 

তাছাড়া উপজেলার পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে পূর্ব চাম্বল, জলদী, বৈলছড়ি, সাধনপুর ইউনিয়নের বাণীগ্রাম ও পুকুরিয়া এলাকায় পান চাষ বেশি হয়ে থাকে। বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিমে সাগর, পূর্বে পাহাড় আর মাঝখানে সমতলভ‚মি। এখানে বছরের বারো মাস নানা ধরনের সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় মিষ্টি ও সুস্বাদু পানের চাষ হয়ে থাকে।

 

ব্যবসায়ীরা স্থানীয় চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি চট্টগ্রাম শহরে পান বাজারজাত করছেন। স্থানীয় বাজার থেকে পাইকারি ব্যাবসায়ীরা পান সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করেন। বাঁশখালীতে সাধারণত সপ্তাহে দুদিন পানের বাজার হলেও একই দিনে সব স্থানে হয় না। স্থানভেদে দিনের ভিন্নতা থাকলেও সপ্তাহে দুই দিনেই বাজার হয়। এসব বাজার বসে রাত ৮টা থেকে। ব্যপ্তি থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। বাঁশখালীর বিশাল পান বাজারটি পুঁইছড়ির মিয়া মার্কেটে। প্রতি শুক্রবার ও রোববার এখানে পানের জনজমাট বাজার বসে।

 

সরেজমিনে বাজার পরিদর্শনে দেখা যায়, সন্ধ্যা নামলেই পাহাড়ি অঞ্চল থেকে নামতে শুরু করে পান চাষিরা। রাত যত বাড়ে বেচাকেনার ধুমও ততো বাড়তে থাকে।

 

পুঁইছড়ি পান চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম ভোরের আকাশকে বলেন, বাঁশখালীর প্রায় পূর্বাঞ্চলে পান চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয় আমাদের এলাকায়। এখানে প্রায় ৮শতাধিক চাষি পান চাষে সম্পৃক্ত। এবার পানের ভালো ফলন হয়েছে। ভালো দামও পাচ্ছে কৃষক। এক কানি জমিতে নতুন বরজ করা থেকে শুরু করে পান বিক্রির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক কানি জমির বরজ থেকে প্রায় ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ হয়। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন সাইজে পানের জোড়া (দুই বিরা) ৫শ’ থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয়।

 

তিনি ভোরের আকাশকে আরো বলেন, পান চাষের প্রধান ঝুঁকি অতিবৃষ্টি। সেপ্টেম্বরে শেষ বর্ষা অর্থাৎ পান চাষ মৌসুমের শুরুতে দেখা যায় বহু বরজ নষ্ট হয়ে যায়। বৃষ্টির মাত্রা অধিক হলে চাষিরা নিশ্চিত লোকসানে পড়ে।

 

সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে আমাদের পুঁইছড়িতে ৪শ’ এর অধিক পানের বরজ হেলে পড়ে। এতে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁশখালীতে পান চাষিদের প্রশিক্ষণ, সহজ কিস্তিতে ঋণ প্রদান করলে পান চাষ হবে আরো সমৃদ্ধ।

 

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু সালেক এ প্রতিনিধিকে বলেন, পান চাষের ওপর একটা কর্মসূচি ছিল সেটার আওতায় কৃষি অফিস থেকে শুধু পান চাষের উপরে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হত। সেটা এখন নেই। তারপরও এখন অন্যান্য প্রশিক্ষণে আমরা একটা সেশন রাখি যেখান থেকে উচ্চমূল্য ফসল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তার মধ্যে পান অন্যতম হিসেবে বাঁশখালীতে বিবেচনা করা হয় এবং প্রশিক্ষণে আলোচনা করা হয়।

 

তিনি আরো বলেন, পান চাষের ওপর নির্দিষ্ট প্রকল্প থাকা উচিত। তাহলে স্পেসিফিক প্রশিক্ষণ দিলে কৃষক আরও উপকৃত হত। পান চাষিদের নির্দিষ্ট কোনো বাজারের জায়গাও নেই। চাম্বল এ পান চাষি সমিতি আছে সেখানেও প্রায় ৯০০ এর অধিক সদস্য আছে।

 

উপজেলার নাপোরা, জলদী, শীলকুপ, বৈলছড়ী, কালীপুর, সাধনপুর, পুকুরিয়া পাহাড়ের পাদদেশে পান চাষ করা হয়। বাঁশখালীতে বাংলা পান, মিষ্টি পান, সাচি পান চাষ করা হয়। পান একটি উচ্চমূল্যের ফসল এবং বানিজ্যিকভাবে লাভজনক। তবে গত হামুনের প্রভাবে বেশ কিছু পান বরজের ক্ষতি হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version