-->
শিরোনাম
ময়লা-আর্বজনাসহ পলিথিনের স্তর

পৌরসদরের খালগুলো মারাত্মক হুমকিতে 

অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম)
পৌরসদরের খালগুলো মারাত্মক হুমকিতে 
খালগুলো পলিথিন আর প্লাস্টিকে ভরে গেছে

সীতাকুন্ড পৌরসদরস্থ খালগুলোর তলদেশে পলিথিনের স্তর পানি নিষ্কাশনে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দখল-দূষণ আর অস্তিত্ব সংকটের সঙ্গে যোগ হয়েছে তলদেশে পুরু পলিথিনের স্তর। ব্যাহত হচ্ছে পানি নিষ্কাশন। কমছে খালের গভীরত্ব ও প্রশস্থতা। পলিথিন আর প্লাস্টিক দূষণে হুমকির মুখে মাছের জীবনচক্র। দুপাড়ে বসবাসকারী জনসাধারণসহ কৃষকদের দাবি খালগুলো এখনই সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

সরেজমিন দক্ষিণ বাজারের গণচৌশাগার সংলগ্ন খালে দেখা গেছে, গৃহস্থালী বর্জ্য, বিভিন্ন পণ্যের প্লাস্টিক মোড়ক, বোতল, ব্যবহৃত মাক্স, ইনজেকশন, সিরিজ এবং প্লাস্টিক বর্জ্যে এ খাল যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় ছাড়াও মশার প্রজনন আখড়ায় পরিণত হয়েছে। খালগুলোর তলদেশ থেকে প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য অপসারণ করা না গেলে পানি নিষ্কাশন সক্ষমতা হারিয়ে বর্ষাকালে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আইনে পলিথিন নিষিদ্ধ হলেও এর উৎপাদন, বাজারজাতকরণ কিংবা ব্যবহার থেমে নেই।

 

পরিবেশবাদীদের মতে, ২০০২ সালে পলিথিন বন্ধে আইন পাস করার পর পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেই কঠোরতা আর থাকেনি। পলিথিন বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও নেই আইনের প্রয়োগ। প্রতিদিন অসংখ্য পলিথিন মাত্র একবার ব্যবহার শেষে নিক্ষেপ হচ্ছে। ব্যবহার্য পলিথিনের একটি অংশ ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হলেও পলিথিন ব্যাগ কিংবা মোড়কের বিরাট অংশ পড়ছে খাল, নালা কিংবা কৃষি জমিতে।

 

ফলে উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি, ভরাট হচ্ছে খালের তলদেশ, ভেঙে পড়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। খালের পাড়ে তাকালে মনে হয় সবাই যেন দখল ভরাট কিংবা প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। পাড়েই তৈরি হচ্ছে কাঁচা-পাকা অবৈধ স্থাপনা। দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে দখলদারদের তালিকা।

 

দক্ষিণ বাইপাস সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী খালটি পৌরসদরের পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসলেও সম্প্রতি দখল-দূষণ অব্যবস্থাপনায় সংকটে পড়ে দিন দিন পরিণত হচ্ছে সরু ড্রেনে। বর্ষা মৌসুমে বুকে পানি থৈ-থৈ করলেও শুষ্কমৌসুমে বর্জ্যগুলো পচে-গলে খালের পানিতে উৎকট দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় দীর্ঘদিন যাবৎ খালের বর্জ্য ও মাটি অপসারণে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

 

ইঞ্জিনিয়ার মো. কামরুদ্দৌজা জানান, খালগুলো পানি নিষ্কাশনে সক্ষমতা হারানোয় বর্ষাকালে রাস্তা-ঘাট ও বসতবাড়ি বার বার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নিচতলার বাসায় ভাড়াটিয়া পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাসা বাড়ির মালিকরা। প্লাবিত হচ্ছে দুপাড় সংলগ্ন বসতবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন।

 

সীতাকুন্ড আইনজীবী কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, একসময় দুপাড়ের কৃষক শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে খালের পানি ব্যবহার করে আসলেও সবকিছুই এখন সোনালি অতীত। আবাসিক এলাকার গৃহস্থালী বর্জ্য, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ, কাঁচা-বাজার এবং বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ফেলা প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সৃষ্ট দুর্গদ্ধে বাড়ছে জনসাধারণের গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

 

পৌর মেয়র আলহাজ বদিউল আলম বলেন, খালগুলোর বিভিন্ন অংশ পাহাড়ি পলি মাটিতে ভরাট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। খালগুলোর সংস্কার ও বর্জ্য অপসারণে অর্থ সহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। খাল-নালা ডাস্টবিন নয় বরং পানি চলাচলের পথ।

 

দুর্ভাগ্যজনক যে, পৌরবাসীর একটি অংশ নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে অসচেতনভাবে খালে ময়লা-আর্বজনা ফেলছে। তাতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খালের দুপাড় সংলগ্ন বসবাসরত পরিবারগুলো। হারিয়ে যাচ্ছে খালের গভীরত্ব ও পানি নিষ্কাশণের সক্ষমতা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version