উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। বেকারত্ব এখানকার অভিশাপ। শিক্ষিত বেকার যুবকরা কাজের সন্ধানে ছুটে যান রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সেই বেকারত্বের গ্লানি ঘোচাতে এবার কুড়িগ্রামে কমলা চাষে নেমেছেন আবু রায়হান ফারুক নামে এক যুবক। সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে তার কমলাবাগান। এর আগে কুড়িগ্রামে কেউ কমলার চাষ করেনি বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অফিস।
সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কাজী হাবিবুর রহমানের ছেলে রায়হান। তার বর্তমানে দুই বিঘা জমিতে রয়েছে শতাধিক কমলাগাছ। গাছে গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় কমলা। চারা লাগানোর মাত্র দেড় বছরের মাথায় গাছে কমলা আসতে শুরু করে। বর্তমান তার বাগানের বয়স ৩০ মাস। এ বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন। সপ্তাহখানেক পর শুরু হবে পাকা কমলা সংগ্রহ। এ বছর বাগান থেকে ১৫ থেকে ২০ মণ কমলা বিক্রি করার আশা করছেন ফারুক। বর্তমানে তার বাজারমূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা, যা উৎপাদন ব্যয়ের দ্বিগুণ।
রায়হান ভোরের আকাশকে জানান, পড়াশোনা শেষ করে আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কৃষিকাজ বেছে নেন। বাবার জমিতে শুরু করেন সমন্বিত ফলের চাষ। প্রায় ছয় একর জমিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফলের গাছ। মাল্টা, আঙুর ও আম চাষের পাশাপাশি কমলা চাষের উদ্যোগ নেন তিনি। প্রথমে বগুড়া শহর থেকে একটি চায়না ‘ঝুড়ি’ জাতের গাছ সংগ্রহ করেন তিনি। একটি গাছ থেকে কলমপদ্ধতি ব্যবহার করে দুই বিঘা জমিতে ১০০ কমলাগাছ রোপণ করেন। গাছের চারা থেকে দেড় বছরের মধ্যে কমলা পেতে শুরু করেন। কমলাবাগানে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। সময়মতো জৈবসার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করে কমলাগাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
আশপাশের এলাকা থেকে অনেকে রায়হানের বাগান দেখতে আসেন। মাইদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ভোরের আকাশকে জানান, রায়হানের কমলাবাগান দেখে খুবই ভালো লাগে। বেকার যুবকরা তার মতো উদ্যোগী হলে বেকারত্ব নিরসনের পাশাপাশি দেশে কমলার চাহিদা পূরণ হবে। সরকারের উচিত এমন উদ্যোক্তাদের সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে উৎসাহ দেওয়া।
রায়হান বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের কমলার চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যদি দেশের মধ্যে কমলার বাণিজ্যিক চাষ করা যায় তাহলে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইরের দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। পড়ালেখা করে চাকরির পেছনে না ছুটে পৈতৃক জমিতে কৃষিতে আত্মকর্মসংস্থানের পথ বেচে নিয়েছি। কমলা চাষের পাশাপাশি বাগানে বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ আছে। তবে কমলার বাজার চাহিদা ভালো থাকায় কমলা চাষে আগ্রহ তৈরি হয়। আমি প্রথম পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে দুই বিঘা জমিতে শতাধিক গাছ লাগাই। এটি মিষ্টি জাতের কমলা; অনেক সুস্বাদু। বর্তমানে বাগানের বয়স আড়াই বছর। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা খরচ করেছি।’
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত ভোরের আকাশকে বলেন, ‘কমলা চাষ এখন জেলায় এক নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। কমলা চাষের এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে রায়হানের কমলাবাগানে কৃষি বিভাগের সব ধরনের সহযোগিতা আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা তার মতো উদ্যোক্তা খুঁজছি, যারা কমলা চাষে বিপ্লব ঘটাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য