-->

খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা

মীর বাবুল, ময়মনসিংহ
খাদ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামের ভরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাকিল আহমেদকে বদলি করা হলেও চাবি হস্তান্তর না করে আত্মগোপনে চলে যান। এতে সন্দেহ শুরু হয়। বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করেও শাকিল আহমেদের কাছ থেকে গুদামের চাবি না পেয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটর উপস্থিতিতে তালা ভাঙা হয়। বিষয়টি নিয়ে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে পায় নানা অনিয়ম। দীর্ঘ তদন্তে খাদ্য গুদামটিতে কাগজপত্রের সঙ্গে চালের বস্তা ও খালি বস্তার অমিল পাওয়া যায়। এ নিয়ে খাদ্য কর্মকর্তা বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয় ও তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।

 

জানা যায়, মুক্তাগাছা খাদ্য গুদামে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে শাকিল আহমেদ গত ২০২১ সালের ৯ মার্চ যোগদান করেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার নিজবরনি গ্রামে। গত ১০ অক্টোবর তাকে বদলি করে সংযুক্ত করা হয় জামালপুরের সিংহজানি খাদ্য গুদামে। সরকারের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া এ কর্মকর্তা বদলির পর গুদামের চাবি নিয়ে উধাও হন।

 

তার কোনো হদিস পাচ্ছিল না গুদাম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। খাদ্য গুদামের নতুন পরিদর্শক সাইফুল ইসলামও চাবি না পাওয়ায় দায়িত্ব বুঝে নিতে পারছিলেন না। এতে খাদ্য গুদামের অচলাবস্থা দেখা দেয়। এ অবস্থায় জেলার গৌরীপুর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

 

গত ২২ অক্টোবর মুক্তাগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) রোমানা রিয়াজের নির্দেশে গুদামের তালা ভাঙা হয়। পরে তদন্ত কমিটি গুদামের চাল ঠিকঠাক আছে কি না, এ বিষয়ে তদন্তের কাজ শুরু করেন। তদন্তের এক মাস পর বের হয়ে আসে গুদামের চাল আত্মসাতের ঘটনা। গুদামের খামালগুলো অভিনব কায়দায় সাজানো হয়েছিল। খামাল দেখে বোঝার কোনো উপায় ছিল না। তদন্ত কমিটি এক মাস তদন্ত করে সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়।

 

তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তদন্তে প্রায় ৩২৮ মেট্রিক টন ৯৮০ কেজি চাল পাওয়া যায়নি। প্রতিটি খামাল যাচাই করে চাল কম পাওয়া যায়। চালগুলো বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে মিলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার কথা ছিল। প্রতি কেজি চালের সরকারি মূল্য ধরা হয়েছিল ৪৪ টাকা। কাগজপত্রে চালগুলো ক্রয় দেখানো হলেও গুদামে মজুদ পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা খালি বস্তা পাওয়া যায়নি ১ হাজার ৮৭৫টি।

 

অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার মুক্তাগাছা থানায় একটি মামলা করেন খাদ্য কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা রুবি। থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার গুদামের ২৮টি খামাল যাচাই করে অনিয়ম পায় তদন্ত কমিটি। খামালগুলো থেকে ৫০ কেজি ও ৩০ কেজি বস্তার চাল পাওয়া যায়নি। আত্মসাৎ হওয়া চালের মূল্য প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ ৭২ হাজার টাকা।

 

মঙ্গলবার মুক্তাগাছা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রেবেকা সুলতানা রুবি বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানার পরিদর্শক শাকিল আহমেদের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন। রেবেকা সুলতানা রুবি বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শাকিলের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অনিয়ম উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে।

 

বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শাকিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে ও ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

মুক্তাগাছা থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেন, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে গ্রেপ্তারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদের বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুদকসহ অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করছে। প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version