-->
শিরোনাম
আত্রাইয়ে অবৈধ জাল

পানির নিচে হালতি বিলের ৫ হাজার হেক্টর জমি

নাটোর প্রতিনিধি
পানির নিচে হালতি বিলের ৫ হাজার হেক্টর জমি
আত্রাই নদীতে অবৈধ সোঁতিজাল বসিয়ে মাছ শিকার করছেন প্রভাবশালীরা

নাটোরের মরা আত্রাই নদীতে পানির গতিপথ বন্ধ করে অবৈধভাবে সোঁতিজাল বসিয়ে মাছ শিকার করায় শস্য ভাণ্ডার খ্যাত হালতি বিলের প্রায় সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর কৃষিজমি এখন পানির নিচে। চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদসহ বিভিন্ন রবিশস্য উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক।

 

ইতোমধ্যে মৌসুম শুরু হলেও এসব জমি থেকে পানি না নামায় কৃষকরা একদিকে সময়মতো জমি প্রস্তুত করতে পারছেন না। অন্যদিকে সরিষা, কন্দ-পেঁয়াজ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রবি ফসল চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় আছেন কৃষকরা। এতে কৃষির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বোরোর আগে সরিষাসহ বিভিন্ন রবিশস্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ।

 

কিন্তু সেখানকার কৃষকদের গলার কাঁটা হয়েছে মরা আত্রাই নদীতে বসানো অবৈধ সোঁতিজাল। এসব সোঁতিজাল অপসারণ করে ফসল উৎপাদনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়ে স্থানীয় দুই শতাধিক কৃষক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি জেলা প্রশাসকের কাছে দেয়া হয়েছে।

 

স্থানীয় সূত্র জানায়, লিখিত আবেদন সূত্রে জানা যায়, জেলার শস্য ভাণ্ডার খ্যাত হালতি বিলে আগে একমাত্র ফসল বোরো ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসলের চাষাবাদ হতো না। কয়েক বছর ধরে সরকারের সার, বীজ ও উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার সুযোগে এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শের কারণে সেখানে প্রতি মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদসহ হরেক রকম রবি শস্য উৎপাদন হচ্ছে। ভোজ্যতৈল উৎপাদনে সরিষা এবং খাদ্য উৎপাদনে গম, ভুট্টা, কন্দ পেঁয়াজ, কাদায় রসুন, বাদামসহ হরেক রকম ফসল। কিন্তু এবার সেই চাষাবাদ নিয়ে অনেকটাই শঙ্কায় আছেন কৃষকরা।

 

প্রভাবশালীরা হালতি বিলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ মরা আত্রাই নদীতে অবৈধ সোঁতিজাল বসিয়ে মাছ শিকার করছেন। পানির গতি পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আর হালতি বিলের কৃষিজমি পানির নিচে অবস্থান করায় সময়মতো ফসল চাষাবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা। পাশাপাশি বোরোর বীজতলা প্রস্তুত করতেও দেরি হচ্ছে। অথচ সময় এসেছে জমি প্রস্তুত করে সরিষাসহ বিভিন্ন রবি শস্য চাষাবাদের।

 

সূত্র আরও জানায়, এ বছর অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে সঠিক সময়ে হালতি বিলে বন্যার পানি আসতে একটু দেরি হয়েছে। অসময়ে হালতি বিলে বন্যার পানি আসায় নামতেও দেরি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ প্রকৃতিগত নয়, বরং মনুষ্য সৃষ্ট কারণে পানি নামার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে গেছে। শুধু সকালে আসেন আর সন্ধ্যার দিকে পারিশ্রমিক বাবদ ৫০০ টাকা করে নিয়ে চলে যান। তারা দিন-রাত পর্যায়ক্রমে কাজ করেন। কেউ কেউ মালিকের পরিচয় জানলেও তারা বলতে পারবেন না। তারা নাম প্রকাশ করলে তাদের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তারা বলেন, এসব সোঁতি জালের পেছনে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। চাইলেই এসব সোঁতিজাল অপসারণ করা যায় না।

 

হালতি বিলের খোলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক কাউছার রহমান, শফির উদ্দিন মণ্ডল, হালতি গ্রামের আফজাল হোসেন, একডালা গ্রামের জামাল হোসেনসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে ভোরের আকাশকে বলেন, সময়মতো হালতি বিলের পানি অপসারণ না হলে তাদের বীজতলা প্রস্তত করতে দেরি হবে এবং বোরো চাষাবাদও এক মাস পিছিয়ে যাবে। গত দুই বছর তারা সময়মতো বীজতলা করে বোরোর চারা রোপণ করেছেন। এমনকি বোরোর আগেই সেখানে সরিষার আবাদ করেছেন। এবার সেটি না হওয়ার আশঙ্কা করছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগকে উদ্যোগ নিতে হবে।

 

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস ভোরের আকাশকে বলেন, চলতি মৌসুমের জন্য হালতি বিলসহ আশপাশের এলাকার ৩ হাজার ৭০০ জন কৃষক প্রণোদনার আওতায় সরিষাসহ বিভিন্ন রবি ফসলের বীজ ও সার, ৩ হাজার ৫০০ জন কৃষককে বোরো উফশি বীজ ও সার এবং ৪০০০ জন কৃষককে বোরো হাইব্রিড বীজ দেয়া হয়েছে। যা সঠিক সময়ে চাষাবাদ করা না গেলে সরকারের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হবে না এবং কৃষকরাও অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

 

এ ব্যাপারে জানতে সিংড়া ইউএনও মাহমুদা খাতুনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ সোঁতিজাল অপসারণ কাজ চলমান আছে।

 

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ভোরের আকাশকে জানান, কৃষি ও কৃষকের কথা বিবেচনা করে পরিস্থিতি উত্তরণে কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। আমার জানামতে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সিংড়া উপজেলা প্রশাসনসহ কৃষি বিভাগকে বিষয়টি সুরাহ করার জন্য বলা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই সমাধান হয়ে যাবে।

 

নাটোরের জেলা প্রশাসক মো. আবু নাছের ভুঁঞা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে ভোরের আকাশকে জানান, অবৈধ সোঁতি জালের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে হালতি বিলসহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version