-->
শিরোনাম
পদ্মাপাড়ে ৪ এভিনিউ নির্মাণ

নদীভাঙন থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে ৫ লক্ষাধিক লোক

মেহেদী হাসান, শরীয়তপুর
নদীভাঙন থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে ৫ লক্ষাধিক লোক
পদ্মাপাড়ে নির্মিত জয় বাংলা এভিনিউ সুরক্ষা বাঁধ

শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় পদ্মাপাড়ে জয় বাংলা এভিনিউ, সোনার বাংলা এভিনিউ, রূপসী বাংলা এভিনিউ ও স্বাধীন বাংলা এভিনিউ নির্মাণে বন্যা ও প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে জেলার ৫ লক্ষাধিক লোক।

 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের (প্রথম সংশোধিত) আওতায় নড়িয়াতে পদ্মাপাড়ে ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা উপজেলার সফি কাজীর মোড় থেকে নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর মোড় পযর্ন্ত ১০.২০ কিলোমিটার দীর্ঘ জয় বাংলা এভিনিউ নামে বেড়িবাঁধ ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

সখিপুরে ৫৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলার তারাবুনিয়া স্টেশন বাজার হতে ধুলারচর মনাই হাওলাদার বাজার পযর্ন্ত ৫.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সোনার বাংলা এভিনিউ নামে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। জাজিরাতে ৮৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট হতে সফি কাজীর মোড় পর্যন্ত ৮.৬৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসী বাংলা এভিনিউ নামে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। নড়িয়ার চরআত্রা-নওপাড়ায় ৫৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২.৪ কিলোমিটার দীর্ঘ স্বাধীন বাংলা নামে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে।

 

এসব বেড়িবাঁধের কোনো কোনোটির কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আবার কোনোটার কাজ শতকরা ৯৬ ভাগসম্পন্ন হয়েছে। এসব বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় পদ্মা নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকার ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার ও ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও সম্পদ নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাচ্ছে।

 

এতে পদ্মা নদী পাড় সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত নড়িয়া উপজেলার মূলফৎগঞ্জ, কেদারপুর, চন্ডিপুর, সুরেশ্বর, নওপাড়া, চরআত্রা, মোক্তারের চর, জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, বিলাশপুর, নাওডোবা, কলমীরচর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচিকাটা, ধুলারচরসহ পদ্মা নদীর আশপাশের ৫ লক্ষাধিক লোক বন্যা ও নদীভাঙন থেকে সুরক্ষা পাচ্ছে।

 

জানা গেছে, শুধু ২০১৮ সালে নড়িয়াতে সাড়ে ৫ হাজার ঘর-বাড়িসহ, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, ফসলিজমি ও বহু সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নড়িয়াতে প্রমত্তা পদ্মার ভাঙা-গড়ার আতঙ্কের এলাকায় এখন ভাঙনরোধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে সুরম্য অট্টালিকা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা প্রতিষ্ঠান।

 

গত ৫০ বছর যাবৎ যেখানে পদ্মার ভাঙাগড়ার সঙ্গে মানুষ লড়াই করে কোনো রকম টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল। সেখানে আজ ভাঙনরোধ হওয়ায় মানুষ নিরাপদে বসবাস করছে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য পরিণত হয়েছে আনন্দের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে। এছাড়া জেলা সদরের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কীর্তিনাশা নদীর ডান ও বাম তীর রক্ষার জন্য নড়িয়া থেকে মাদারীপুর জেলার কালকিনি পর্যন্ত প্রায় ২০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ নিমার্ণের কাজ চলমান রয়েছে। এতে হাজার হাজার লোক নদীভাঙন ও বন্যার হাত থেকে সুরক্ষা পাবে।

 

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, ৫ বছর আগেও নড়িয়ায় নদীভাঙন ছিল। হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে এখন আর নড়িয়ায় নদী ভাঙন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী প্রজন্ম নিয়ে ভাবেন এবং তিনি দূরদর্শী পদক্ষেপ নেন। সে জন্য তিনি ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নেরও ঘোষণা দিয়েছেন। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সারা দেশে নদীভাঙন ও জলাবদ্ধতার কোনো সমস্যাই থাকবে না। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

 

শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, আমরা বর্তমান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর সঠিক দিক নির্দেশনায় নিরলস নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে সফলতার সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে নদীতীর সংরক্ষণ ও ড্রেজিং কাজ করায় নদীভাঙন প্রতিরোধ করা হয়েছে। এতে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক ও মূল চ্যানেল বজায় রয়েছে।

 

তাছাড়া এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ লাভ করেছে। খাল পুনর্খননের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। মৎস্য সম্পদ উন্নয়নসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version