-->
শিরোনাম

পুঁজির অভাবে পিছিয়ে পড়ছেন শঙ্খ কারিগররা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
পুঁজির অভাবে পিছিয়ে পড়ছেন শঙ্খ কারিগররা
শাঁখা তৈরি করছেন মানিকগঞ্জের ছোট বরুরিয়া গ্রামের শাঁখাপল্লির শঙ্খ কারিগররা

মানিকগঞ্জের ঘিওরের শাঁখা শিল্পের চাহিদা এবং যশ রয়েছে সারা দেশজুড়ে। শুধু অলংকার হিসেবেই নয়, সনাতন সম্প্রদায়ের নারীদের হাতে পড়ার শাঁখার স্থান সর্বাগ্রে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহনকরা এই শিল্প প্রয়োজনীয় পুঁজি আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ম্লাণ হওয়ার পথে। উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের ছোট বরুরিয়া গ্রামের অর্ধশত পরিবারের শিল্পীরা এখনো সুনিপুনভাবে শাঁখা তৈরি করে নিজেদের দক্ষতার দৃষ্টান্ত রেখে আসছেন। এই শিল্পকে পরিচিত করে তুলতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

 

জানা গেছে, উনিশ শতকের শুরুর দিকে ছোট বরুরিয়া গ্রামের সেন, দত্ত ও কর পরিবারের সদস্যরা হাতে ব্যবহারের শাঁখা তৈরির কাজ শুরু করেন। তাদের পূর্ব পুরুষরা শাঁখারী বাজার ও চট্টগ্রাম থেকে এ কাজ শিখেছিলেন। শুরুর দিকে তারা এলাকায় ঘুরে ঘুরে শাঁখা বিক্রি করতেন। পরে নাম যশ ছড়িয়ে পরার পর বাজার প্রসারিত হয়।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, ছায়াঘেরা ছোট বরুরিয়া গ্রামের শাঁখাপল্লিতে সারাদিন ঠুং ঠাং আর ঝিঁঝিঁ পোকার মতো শঙ্খ কাটার আওয়াজ। পুরুষদের পাশাপাশি বাড়ির নারী, শিশুরাও এ কাজে সহায়তা করছেন। পাইকার ও খুচরা ক্রেতাদের সঙ্গে চলছে দরদাম করা। এই শাঁখা তৈরি করেই সারা বছর সংসার চলে এখানকার ব্যবসায়ী ও কারিগরদের।

 

ঘিওরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা দোলা রায় ভোরের আকাশকে বলেন, শত বছরেরও বেশি সময় ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঘিওরের শঙ্খশিল্প। এখান থেকে আমরা অর্ডার দিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের শাঁখা ক্রয় করি। এছাড়াও, বিয়ে, পূজা-পার্বণ উপলক্ষে এখানকার শিল্পীদের হাতে তৈরি শাঁখার ব্যবহার হয় বেশি।

 

শঙ্খশিল্পী প্রহল্লাদ সেন বলেন, শ্রীলঙ্কা ও ভারত থেকে আসা শঙ্খ ঢাকা ও খুলনার মহাজনদের কাছ থেকে আমরা কিনে আনি। সেই শঙ্খ মেশিনে কাটার পর হাতের কারুকাজে তৈরি হয় বিভিন্ন আকৃতি ও ডিজাইনের শাঁখা। সাধারণত প্রতি জোড়া শাঁখা ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

 

কারিগর শক্তি কর ও হরিপদ কর ভোরের আকাশকে বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া এবং বাইরে থেকে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

 

ঘিওর লোকনাথ শঙ্খ শিল্পালয়ের মালিক সোপেন দত্ত বলেন, এখানকার শাঁখা ভারতে ও ইউরোপের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কিনে নিয়ে যান। ঢাকা ও স্থানীয় মহাজনদের অর্ডার অনুযায়ী নকশা আর ডিজাইনের শাঁখা তৈরি করি। আমাদের শাঁখা ব্যবসার কদর ও সম্মান ছিল সারা দেশে। কিন্তু পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনতে পারছি না। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

 

গৃহবধূ দীপা সেন বলেন, বড় শঙ্খ কেটে শাঁখা তৈরি করার পর যে শঙ্খগুড়ো জমে, তা নববধূ ও কিশোরীরা মুখের দাগ দূরীকরণের জন্য কিনে নেন। পূজার কাজে ব্যবহার করার জন্য নকশা করা আস্ত শঙ্খও তৈরি করি। বাড়ির পুরুষদের সঙ্গে আমরাও নকশার কাজে সহায়তা করি।

 

পয়লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, এই গ্রামের শাঁখা শিল্পের ঐতিহ্য শত বছরেরও বেশি। সরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা করা হলে এখানকার শিল্পীদের তৈরি শাঁখা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের বাজোরেরও সমাদৃত হবে।

 

ইউএনও আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলার লোকশিল্পের মধ্যে অন্যতম এই গৌরবোজ্জ্বল শাঁখাশিল্প। ঘিওরের এই শাঁখাশিল্প সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং অনলাইন বাজার সৃষ্টিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে যাবতীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version