-->

কাঁচা ফুলের রপ্তানি ক্রমেই বাড়ছে

যশোর প্রতিনিধি
কাঁচা ফুলের রপ্তানি ক্রমেই বাড়ছে
যশোরের একটি ফুলের বাগান

আমাদের দেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফুলের চাষ শুরু হয় সত্তর দশকের গোড়ার দিকে। আশির দশকে এসে তা ব্যাপকতা লাভ করে। প্রাথমিক অবস্থায় যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভিত্তিতে ফুলের চাষ শুরু হয়। পরবর্তী পর্যায়ে তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

 

বর্তমানে যশোর, সাভার, চুয়াডাঙ্গা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রংপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ফুল উৎপাদনকারী ফুল উৎপাদন করছে। দেশের ৭০ ভাগ ফুল যশোরে উৎপাদন করছে। ফুল উৎপাদনের সঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার যুক্ত আছে। ফুল উৎপাদন, বিপণন, বিক্রি এবং রপ্তানি কাজে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ২ লাখ লোক নিয়োজিত আছে।

 

বর্তমানে আমাদের দেশে কাঁচা ফুল একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। আমাদের দেশে কাঁচা ফুলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন উৎসব, পার্বণে কাঁচা ফুলের ব্যবহার হচ্ছে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের কাঁচা ফুল এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্যের তালিকায় কাঁচা ফুলের নাম উঠে এসেছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত কাঁচা ফুল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ফুল রপ্তানি করে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।

 

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে কাঁচা ফুল ইতোমধ্যে বিশেষ স্থান দখল করেছে। ফুল চাষে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। বাংলাদেশের জমি এবং জলবায়ু কাঁচা ফুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের ফুল উৎপন্ন হয়। এসব ফুলের মধ্যে গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, লিলিয়াম, থাইঅর্কিড, কার্নেশন, শর্বারা, গ্লোবাল প্রভৃতি ফুল রপ্তানি হচ্ছে।

 

বাংলাদেশের কাঁচা ফুল মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, পাকিস্তান, ভারত, ইতালি, কানাডা, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সে রপ্তানি করা হচ্ছে। এসব ফুলে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসেবে দেখা যায়-২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে এ দেশ থেকে ফুল রপ্তানি হয়েছিল ২৭৬ কোটি ৯ লাখ টাকা, ২০০৯-২০১০ সালে ৩২৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, ২০১০-২০১১ সালে ৩৬২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা আয় হয়েছিল।

 

২০১৩ সালে কাঁচা ফুল রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১৬.৫৮ মিলিয়ন ডলার। দিন দিন ফুল রপ্তানি ক্রমেই বাড়ছে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে এ আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। ফুল উৎপাদনে দেশের প্রায় ৪ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁচা ফুলের চাষ করা হচ্ছে। সারা দেশে খুচরা বিক্রেতার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজারের মতো। এমন একটি সম্ভাবনাময় খাতের ব্যাপারে সরকারের কোনো আগ্রহ দেখা যায় না।

 

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে পরিমাণ ফুলের চাহিদা রয়েছে সে পরিমাণ ফুল রপ্তানি করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নবদিগন্তের সূচনা হতো। ফুল চাষের ব্যাপারে ফুলচাষিদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিদিন। সর্বপ্রথম ফুল চাষের ব্যাপারে ফুলচাষিরা সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছে না। ফুল উৎপন্ন করে ফুলচাষিরা প্রকৃত মূল্য পাচ্ছে না।

 

পরিবহন, বাজারজাতকরণ এবং বিপণন সমন্বয় না থাকায় ফুলচাষিদের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের দেশে ফুলচাষিদের ফুল চাষের ব্যাপারে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই, ফুল রপ্তানিতে যে সমস্যা প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো বাংলাদেশ বিমানে কোনো কার্গো সুবিধা না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত পচনশীল পণ্য পাঠানো সম্ভব হয় না, এখানে নেই কোনো উন্নত প্যাকেজিং এবং সংরক্ষণের জন্য হিমাগার, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ফ্রিজার ভ্যান, স্বল্প ভাড়ায় বিমানে করে ফুল রপ্তানি ব্যবস্থা। ফুলকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় কীটনাশক পায় না ফুলচাষিরা।

 

বাংলাদেশে উৎপাদিত কাঁচা ফুল বিদেশে রপ্তানির ব্যাপারে এবং এ খাত থেকে কোটি কোটি ডলার আয় করার লক্ষ্যে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, বিশ্বের যেসব দেশে ফুলের বড় বড় মার্কেট আছে সেসব দেশের সঙ্গে রপ্তানি পণ্য তালিকায় কাঁচা ফুলের নাম অন্তর্ভুক্ত করা। পরিবহন সমস্যা যেমন বিমানের ভাড়া কমানোসহ কার্গো নিশ্চিত করা। কোল্ড ভেসেলের ব্যবস্থা করে রপ্তানিতে সহায়তা করা। ঢাকা শহরে প্যাকেজিং গ্রেডিংয়ের জন্য মার্কেটসংলগ্ন শ্লেল্টার তৈরি করা।

 

ফুল সতেজ এবং তরতাজা রাখা এবং বীজ সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন করা। ফুল উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়ন করা। বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি গবেষণায় ল্যাবরেটনি স্থাপন, ফুলচাষি, ফুল ব্যবসায়ী, ডিজাইনারদের জন্য পোস্ট হারবেস্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। একটি আধুনিক কোল্ড স্টোরেজ করার জন্য স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।

 

সম্ভাবনাময় রপ্তানিপণ্য কাঁচা ফুল চাষ এবং রপ্তানির ব্যাপারে ফুলচাষি, রপ্তানিকারকদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এ খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version